মাত্র ২০০০ টাকায় বান্দরবানের আলীকদম

আলীর সুড়ঙ্গ

ভ্রমনের এই পর্বে থাকছে বান্দরবানের আলীকদমের মারায়ণ তং এর চূড়ায় ক্যাম্পিং এবং আলীর সুড়ঙ্গে অভিযান সাথে থাকছে  বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় দেশের উচু সড়ক বান্দরবানের থানচি-আলীকদমের ডিম পাহাড়। এক ঢিলে তিন পাখি। তো চলুন শুরু করা যাক...

দিন ১ঃ

বান্দরবান আলীকদম এর মারায়ণ তং (মারাইং তং যাদী) পাহাড়ে যেতে হলে প্রথমে আপনাকে যেকোনো কক্সবাজারগামী বাসে করে কক্সবাজার চকরিয়া বাস টারমিনালে নামতে হবে। তারপর আলীকদমের লোকাল বাসে করে আলীকদম, অথবা ঢাকা থেকে সরাসরি আলীকদম এর বাস নন এসি এ করে আবাসিক নামক জায়গায় নেমে মারায়ণ তং এর উদ্দেশ্যে ট্রেকিং শুরু করতে হবে (তবে এর আগে স্থানীয় থানা থেকে অনুমতি নিয়ে যাওয়া ভালো,না হলে ট্রেকিং এর সময় কিছু অসৎ লোক চাঁদাবাজি করতে পারে।আমাদেরকে ৫০০ টাকা গচ্চা দিতে হয়েছে এই কারনে ।রাড়ুই নামের এক স্থানীয় লোক চাঁদাবাজি করে টাকা নেয় আমাদের কাছ থেকে।আর যেহেতু আলীকদম উপজেলাতে আগে অপহরণ এর ঘটনা রয়েছে তাই আমরাও তর্ক বেশিদূর আগাইনি)

যাইহোক মারায়ণ তং ট্রেকিং এ আমরা কোনো গাইড সাথে নিয়ে যাইনি,রাস্তা চেনা তেমন জটিল কাজ না।আমার মনে হয় কারো গাইড এর পিছনে অযথা খরচ করা উচিত না এখানে। যদি আপনি পাহাড়ের চূড়ায় ক্যাম্পিং করতে চান তাহলে অবশ্যই চকরিয়া থেকে প্রয়োজনীয় খাবার আর পানি কিনে নিয়ে আসবেন এখানে এবং অবশ্যই ঢাকা থেকে তাঁবু এবং শীতের কাপড় নিয়ে আসবেন। এক্ষেত্রে একটি কথা মনে রাখবেন আপনি যা নিবেন আপনার সাথে তা আপনাকেই ট্রেকিং এর সময় বহন করে নিয়ে যেতে হবে।তাই অপ্রয়োজনীয় জিনিস না নেয়া ভালো।আলীকদম আবাসিকে ট্রেকিং শুরুর পর ওখানে ভালো দোকান পাবেন না চায়ের দোকান ছাড়া।

প্রায় ১.৫ থেকে ২ ঘন্টা ট্রেকিং এর পর আপনি মারায়ণ তং পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছাতে পারবেন।পথে একটি বড় বট গাছ পড়বে ওখানে একটু জিরিয়ে নিতে পারেন।যারা ট্রেকিং এ নতুন তারা মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখবেন।যাই হোক যখন দেখবেন অন্য একটি বটগাছের পাশে দুটি বৌদ্ধদেবের মূর্তি তখন বুঝবেন আপনি পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গেছেন।এরপর আপনার কাজ সন্ধ্যার হবার আগেই তাঁবু খাটানো থেকে শুরু করে অন্যান্য সব প্রস্তুতি সেরে ফেলা।সন্ধ্যার পর রাতে চাঁদ উঠার আগ পর্যন্ত উপরে ঘুটঘুটে অন্ধকার, চারপাশে ভয়ংকর পরিবেশ এবং প্রচন্ড বাতাস।সন্ধ্যায় দেবের মূর্তি দুটোর দিকে তাকালেই মনে একটা ভয় কাজ করা শুরু করে।আর সকাল দুপুর যতই গরম পড়ুক না কেন সূর্যাস্তের পর পাহাড়ের চূড়ায় প্রচন্ড বাতাস এবং তারসাথে হাড়কাঁপানো শীত।শীতের কাপড় না নিয়ে আসলে যে আপনি রাতে অসুস্থ হয়ে পড়বেন এ ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই।আরেকটি কথা বলে রাখতে চাই সারারাত আলোর ব্যবস্থা অবশ্যই সাথে রাখবেন।রাতে ঘুটঘুটে অন্ধকারে এত ভয়ঙ্কর পরিবেশে একসাথে না থাকলে অনেক রকমের বিপদে পরতে পারেন।মনে রাখবেন পাহাড়ের চূড়ায় কোনো বিপদে পড়লে আপনাকে সাহায্য করার মত কোন মানুষ পাবেন না।এবং বাতাসে যেন তাঁবু উড়ে না যায় তারজন্য তাঁবুর বেস শক্ত করে মাটিতে লাগাবেন।আমরা ৫ জনের গ্রুপ রাতে ক্যাম্পফায়ার ও বার বি কিউ করেছিলাম চাঁদের আলোর নিচে।এখনো আমার জীবনের অন্যতম সেরা রাত সেই রাত।

দিন ২ঃ

পরদিন সকাল সকাল উঠে যাবেন যদি সূর্যোদয় দেখতে চান।তবে আমার মনে হয় না আপনি রাতে ঘুমাতে পারবেন ওই স্বর্গীয় কিন্তু ভুতুড়ে পরিবেশে।তারপর আগের মতো ট্রেকিং করে আলীকদম আবাসিকে যাবেন।পাহাড় থেকে নামার সময় খুব আরামসে নামতে পারবেন।একটুও কষ্ট হবে না।যারা আগে ট্রেকিং করেছেন তারা জানেন বেপারটা।আরেকটা কথা এখানে বলে রাখতে চাই অবশ্যই নীচে ট্রেকিং শুরুর আগে আপনার ক্যাম্পিং এর আশেপাশের জায়গা পরিষ্কার করে যাবেন এবং খাবারের প্যাকেট,পলিথিন ইত্যাদি ব্যাগে করে নিয়ে যাবেন।

এখন আলীর সুড়ঙ্গে যাবার কথা বলি।আলীকদম বাজার যাবেন টমটম করে আবাসিক থেকে।ওখানে নাস্তা করে একটা অটো ভাড়া নিবেন।অটো চালককে আপনার গাইড হিসেবে নিতে পারেন আলীর সুড়ঙ্গে।আমাদের সিএনজি চালক ৪০০ টাকায় আলীর সুড়ঙ্গে নিয়ে যাওয়া এবং গাইড করতে রাজি হয়।অটো করে মাতামুহুরী নদীর তীরে যাবেন ।ওখানে এই সিজনে হাঁটু পানি।সহজেই নদী হেঁটে পাড় হতে পারবেন।নদী পার হওয়ার পরই আলীর পাহাড়ের গিরিপথ ধরে এগুতে হবে।ওই পথ তা পাড়ি দিতেও কিছুটা বেগ পেতে হবে। গাইড আমাদেরকে আলীর সুড়ঙ্গের ৪টা মুখের কথা বলেন।তার মধ্যে ২টা সুড়ঙ্গ মোটামুটি বড়।আমরা ওই ২টা সুড়ঙ্গ পথে গিয়েছিলাম।প্রথম সুড়ঙ্গমুখ একটা মই দিয়ে ও আরেকটা মুখ দড়ি দিয়ে ও লাঠি ব্যবহার করে উঠতে হয়।সুড়ঙ্গের ভিতরে প্রচন্ড গরম আর ভ্যাপসা পরিবেশ এবং অন্ধকার।সাথে টর্চ না নিয়ে গেলে এগুতেই পারবেন না।২য় সুড়ঙ্গের ভিতরে বাদুড় ভর্তি।আর কিছু কিছু জায়গা শুয়ে হামাগরি দিয়ে যেতে হয়।আপনার নিঃশাস নিতে কষ্ট হলে বেশিদূর না গিয়ে বের হয়ে যাবেন সুড়ঙ্গ থেকে।সুড়ঙ্গে কিছু কিছু পথ অত্যন্ত সরু,ওসব জায়গায় যেতে গিয়ে বেরোবার সময় আটকা পড়তে পারেন।তাই সাবধানে গ্রুপে থাকবার চেষ্টা করবেন সবসময়।

রহস্যে ঘেরা আলির সুরঙ্গ

আলীর সুড়ঙ্গ দেখা শেষ হলে কক্সবাজার চকিরিয়া গিয়ে ঢাকার রাতের বাসে করে চলে আসবেন ঢাকায়।সাথে নিয়ে আসবেন কিছু স্মৃতি যা বলে অথবা লিখে প্রকাশ করা যায় না।

২ দিন ১ রাতের এই ছোট্ট ট্যুরে আমাদের মাথাপিছু প্রায় ২০০০ টাকা খরচ হয়েছিল।

মাথাপিছু খরচঃ

যাতায়াত - 

ঢাকা- চকরিয়া ১১০০ (৫৫০+৫৫০) টাকা (আপ-ডাউন)।

লোকাল বাস - ১২০ (৬০+৬০) টাকা

আটো - ১০০ টাকা

খাবার - ৫০০ টাকা (বার-বি-কিউ সহ)

থাকা - ফ্রি (ক্যাম্পিং)

অন্যান্য - ১৫০+ টাকা

সৌজন্যেঃ Tanvir Ahmed

এক দিনে আলীর সুড়ঙ্গ, রূপমুহুরী ঝর্ণা দেখে আবার রাতের বাসে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিতে পারবেন। চট্রগ্রাম থেকেও একদিনে দেখে আসতে পারবেন । তারপরও যদি থাকতে হয়। আলীকদমে থাকার তেমন ভাল ব্যবস্থা নাই। জেলা পরিষদেরে একটি ডাক বাংলো আছে যার অবস্থান বাস স্ট্যান্ড থেকে স্বল্প দুরত্বে পান বাজারে ও ব্যক্তি মালিকানা একটি বোর্ডিং আছে যার অবস্থান আলীকদম বাজারে। বোর্ডিং এর মান তেমন ভাল না। ডাক বাংলোতে মোট ১০ টি রুম আছে । ভাড়া – নীচ তলার ৫ টি প্রতিটি ৫০০ টাকা করে। দ্বিতীয় তলার ৫ টি প্রতিটি ১০০০ টাকা করে। জিয়া বোর্ডিং এ দুই বিছানার রুম ভাড়া- ৪৫০ টাকা । আলীকদমে থাকার জন্য জেলা পরিষদ রেস্ট হাউজের কেয়ারটেকার খালেদ সাহেবের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। খালেদের নম্বর: ০১৫৫৮৬০৪০৭৫

জিয়া বোর্ডিং এ যোগাযোগঃ মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন (01828933633, 01553603915)

কোথায় খাবেনঃ
আলীকদমের খাবার হোটেল গুলো মাঝারি মানের। খুব বেশী কিছু আশা করা ভুল হবে।

গাইডঃ
আলীর সুড়ঙ্গে আগে গিয়ে না থাকলে অবশ্যই গাইড নিবেন । গাইড হিসেবে ওদের নিতে পারেন। খুশি হয়ে যা দিবেন তাতেই ওরা খুশি। সাদ্দাম -01831507293/01828933633, খালেক – 01837837591

========================================================================

মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।