একই সাথে ঘুরে আসলাম সিলেটের শ্রীমঙ্গল ও হাম হাম ঝর্ণা


শ্রীমঙ্গল

শ্রীমঙ্গল

শ্রীমংগল সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্ভুক্ত একটি উপজেলা। ঢাকা থেকে বাসে যেতে ৪-৪.৩০ ঘন্টা সময় লাগে। ট্রেনে যেতে ৫ ঘন্টা সময় লাগে।ঢাকার খুব কাছে হওয়ায় দিন দিন শ্রীমংগল পর্যটক দের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া এইখানে নেই সিলেট কিংবা চিটাগং এর মত শোরগোল। তাই যারা নির্জনতার মধ্যে দুইটা দিন কাটাতে চান তাদের জন্য খুব ভাল ট্যুরিষ্ট স্পট হল এই শ্রীমংগল। শ্রীমংগল বিখ্যাত চা বাগনের জন্য, শ্রীমংগল বিখ্যাত সাত রংগা চা এর জন্য। কিন্তু এইখানে রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর স্পট।

যা যা দেখবেন?

  • আনারস বাগান
  • লেমন গার্ডেন
  • টি গার্ডেন
  • রাবার বাগান
  • মাধবপুর লেক
  • শমসের নগর গলফ মাঠ(গুলটিলা)
  • লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট, খাসিয়া পল্লি
  • বাংলাদেশ চা গবেষণা ইন্সটিটিউট BTRI
  • নীলকন্ঠ চা কেবিনের ৮ রঙা চা
  • ক্ষিতিশ বাবুর চিড়িয়াখানা
  • বধ্যভুমি (ডিনস্টন সিমেট্রি)
  • ভাড়াউড়া লেক
  • ওফিং হিল
  • যজ্ঞ কুন্ডের ঝর্ণা
  • নির্মাই শিববাড়ী
  • বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এর সমাধি
  • আদমপুর বন
  • হাম হাম ঝর্ণা

তো শুরু করা যাক আমাদের ভ্রমন...


শ্রীমংগলে রয়েছে বেশ কিছু সুন্দর সুন্দর স্পট যা আমরা খুব সহজেই দুই দিনে কাভার করতে পারি। আমার এই প্লান টা তাই দুই দিনের জন্য করা। 

প্রথম দিন

প্রথম দিন যেসব জায়গায় ঘোরা যায় তা হচ্ছে, 
  • লাউয়াছড়া উদ্যান
  • টি রিচার্স বোর্ড
  • বধ্যভুমি
  • নীলকন্ঠ ( সাত রঙ্গা চা) 
লাউয়াছড়া উদ্যানঃ 
শ্রীমংগল শহর থেকে ২০-৩০ মিনিট লাগবে সিএনজি অথবা অটো করে যেতে , টাকা নিবে ১৫০-২০০ টাকা। এইখানে চাইলে ঘন্টা দুই সময় কাটাতে পারেন। ঢূকতে টিকিট কাটতে হবে । পার হেড ২৩ টাকা (১৮/০৮/২০১৬)। লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলে গিয়েছে ট্রেন লাইন। লাউয়াছড়ায় ঢুকে সোজা সেখানে চলে যেতে পারেন। কিছু সময় ছবি উঠিয়ে এইবার চলে যান বনের গভীরে। দুই পাশ এ বন , মাঝখান দিয়ে আকা বাকা রাস্তা। এমন কয়েক টা বন্য ট্রেইল রয়েছে লাউয়াছড়ায়। কাউন্টারে হয়ত আপনাকে গাইড নিতে বলবে , ট্রেইল ভেদে যার ফিস ১০০-৫০০ টাকা। আপনি যদি সাহসী হন তাহলে গাইড ছাড়াই যেতে পারেন।চুপ চাপ নির্জনতার মাঝে ঘন্টা খানেক হাটতে খুব ভাল লাগবে সেটা আপনাকে বলতে পারি। ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে দেখা পেতে পারেন বন্য প্রানীর। অনুরোধ থাকবে বনের গভীরে গিয়ে হৈ চৈ করবেন না। 

টি রিচার্স বোর্ডঃ 
লাউয়াছড়া থেকে বের হয়ে আরেকটা সিএনজি ভাড়া করে চলে যান চা গবেষনা অফিসে। মুলত এইটা সরকারী প্রতিষ্টান। অফিস টাইমে ভেতরে ঢূকতে দিতে চায়না ।কিন্তু মেইন গেটের মামুদের সাথে খাতির করে ভেতরে যাওয়া যায়। খুব সুন্দর পরিপাটী করে সাজানো এর ভেতর টা।চা নিয়ে অনেক তথ্য জানতে পারবেন।ভেতরের নয়নমনোহর পরিবেশে ঘণ্টা খানেক সময় কাটাতে পারেন, ভাল লাগবে আশা করছি। এবার লাঞ্ছের সময়।শ্রীমংগল শহরে বেশ কিছু রেষ্টূরেন্ট থাকলেও আমার পছন্দ ওয়ান আন্ড অনলি পানশী রেষ্টুরেন্ট, কম খরচে ভাল দেশী খাবার খেতে পানশীর বিকল্প নেই। শ্রীমংগল শহরের খুব কাছেই এর অবস্থান।লাঞ্চ করে নিজ নিজ হোটেল অথবা রিসোর্টে বিশ্রাম নিয়ে নেন কিছুক্ষন। 

বীরশ্রেষ্ট বধ্যভুমিঃ 
দুপুরে হালক বিশ্রাম নিয়ে বিকেল বেলায় আড্ডা দিতে চলে যান বধ্যভুমি বলে পরিচিত একটি সুন্দর মাঠে।অপরুপ ভাবে সাজান হয়েছে। পাশ দিয়ে বয়ে চলা পানির ছড়া জায়গা টা সৌন্দর্য বাড়িয়ে দিয়েছে কয়েক গুন। গল্প করতে করতে কখন যে ঘণ্টা দুই সময় কেটে যাবে বুঝতেও পারবেন না, পাশেই বিজিবির ব্যবস্থপনায়, বিকেলের জন্য সুস্বাদু নাস্তার ব্যবস্থা আছে। 

নীলকন্ঠ সাত রঙ্গা চাঃ 
শ্রীমংগল শহরে বেশ কয়েক জায়গায় সাত রঙ্গা চা পাওয়া গেলেও, অরিজিনাল টা হল এই নীলকন্ঠ। তাই রিকশা অথবা সিএঞ্জি করে যাওয়ার সময় বলে নিবেন অরিজিনাল টায় নিয়ে যেতে।শহর থেকে ২০-৩০ টাকা রিকশা ভাড়ায় যেতে পারেন এইখানে।আমি সাধারনত মাগবিব নামাজের পরের সময় এইখানেই কাটাই। সাত রঙ্গা চা খেতে পারবেন ৭৫ টাকায় (১৭।/০৮/২০১৬)। তা ছাড়া লেবু চা, আদা চা ও ভাল লাগবে। পাশের দোকানে চটপটি , ফুসকা আছে, তাও খেতে পারেন চাইলে। তারপর রাতের ডিনার করে আবার ফিরে যান নিজ নিজ হোটেল অথবা রিসোর্টে। নিন পরের দিনের প্রস্তুতি। 


দ্বিতীয় দিন 

দ্বিতীয় দিন আমরা ঘুরব 
  • মাধবপুর লেক
  • গুল টিলা ( শমসেরনগর গলফ মাঠ)
  • সীতেশের চিড়িয়াখানা।
মাধবপুর লেকঃ 
ছোট খাট একটা বগা লেক, কিন্তু ট্রেকিং নেই, পাহাড়ের উপর প্রাকৃতিক জলের আধার এই লেক। শ্রীমংগল শহর থেকে ৪৫ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টার দূরত্ব। দ্বিতীয় দিন শুরু করতে পারেন এই লেক টি দিয়ে। গেলে মন ভাল না হয়ে উপায় নেই, লেক এ পদ্ম ফুল গুলা লেকের সৌন্দর্য কে বাড়িয়ে দিয়েছে অনেক গুন। যেতে আসতে ২ ঘন্টা আর সেইখানে ১ থেকে দেড় ঘন্টা সময় কাটাতে পারেন। সিএনজি ভাড়া , আপডাউন ওয়েটীং মিলিয়ে ৭০০-৮০০ হবে। ঢুকার টিকিট ১০ টাকা পার হেড। কিছু ছোট বাচ্চা গাইড হওয়ার জন্য বলে। এইখানে গাইডের কোন প্রয়োজন নেই। 

গুল টিলা ( শমসেরনগর গলফ ক্লাব): 
মাধবপুর এলাকা, তারপর কমলগঞ্জ ছাড়িইয়ে আরও সামনে শমসেরনগর। সেখানে চা বাগানে শ্রমজীবি দের আবাসস্থল এর পাশেই গড়ে ঊঠেছে এই টিলা। স্থানীয় রা বলে গুল টিলা আসলে শমসের নগরের গলফ ক্লাব। জায়গা টা এত সুন্দর , একটা বিকেল এইখানে অনায়াস কাটিয়ে দেওয়া যাই। গেলে আর আসতে মন চায়না। গাছ, লেকের পদ্ম আর পাশে ক্ষেতী জমি মিলিয়ে প্রকৃতির এক বিচিত্র খেয়াল যেন এই জায়গা টা। আমি মাধবপুর লেক + গুল টিলা সহ সারাদিন ১১০০ টাকায় সিএঞ্জি রিজার্ভ করেছিলাম। শুধু গুল টীলায় গেলে শ্রীমংগল শহর থেকে ১ ঘন্টা লাগবে আর সিএঞ্জি ভাড়া আপডাউন ৭০০-৮০০ টাকা নেওয়া উচিত। 

সীতেশ এর চিড়িয়াখানাঃ 
বিকেল বেলায় চলে যান শ্রীমংগল শহরের প্রান্তে অবস্তিত সীতেশ বাবুর চিড়িয়াখানায়। ভালুক, হরিন। কথা বলা ময়না, বিভিন্ন রকম বিড়াল, সাপ। পাখি দিয়ে সাজান ব্যক্তিগত এই চিড়িয়াখানা টা ভাল লাগবে।বাচ্চা থাকলে ত এইখানে যেতেই হবে , বাচ্চা কে নিয়ে দাড় করাবেন কথা বলা টিয়ার সামনে, দেখবেন আপনার বাচ্চা কি আনন্দ পায়।এইখানে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা আর শহর থেকে রিকশা নিয়েই যাওয়া যায়, ২০ টাকা নিবে। আর শ্রীমংগল এর রাস্তার দুই পাশে অজস্র চা বাগান, আপনার পরিবহনের ড্রাইভার কে বলে যে কোণ চা বাগানে নেমে যেতে পারেন। 
বিকেল থেকেই ঢাকার উদ্দেশ্যে গাড়ি ছাড়া শুরু করে, আপনি বিকাল ৫ টার মধ্যেই সব স্পট শেষ করে গাড়ি তে ঊঠে যেতে পারেন ঢাকার উদ্দেশ্যে অথবা একটু রোমাঞ্চপ্রিয় হলে বিকাল ৫ টার ট্রেন পারাবাত এঊ আসতে পারেন। এই হল দুই দিনের পূর্নাংগ প্লান। 

থাকবেন কোথায়ঃ 
শহরের ভিতরে জাকারিয়া হোটেল টা ভাল লেগেছে। তবে যারা শ্রীমংগলে যান তাদের কে বলব পারলে হোটেল অ্যাভয়েড করে আপনার সামর্থ্যের মধ্যে কোন রিসোর্ট এ থাকেন, রিসোর্টগুলায় বেশি ভাল লাগবে, ন্যাচার এর কাছা কাছি , একটা ভাল ফিলিংস পাবেন, নিস্বর্গ রিসোর্ট এ ছিলাম আমি, রেটিং ৬/১০। এই ইন্টারনেটের যুগে খোজখবর নিলে আরও ভাল রিসোর্ট পেতে পারেন। 

খাওয়া দাওয়াঃ 
ভাল বেশ কিছু হোটেল আছে তবে আমি পানশী ছাড়া কোথাও রেকমেন্ড করতে পারছিনা, ঐখানকার খাওয়া আসলেই অনেক ভাল, ফালুদার স্বাদ এখনো মুখে লেগে আছে। আশা করি ট্রাভেলার ভাই দের ভাল কিছু সময় কাটবে, আমার এই লিখা থেকে যদি আপনার উপকৃৎ হন , সেটাই হবে আমার লিখার স্বার্থকতা। 

কিছু বিশেষ তথ্যঃ 
১। হামহাম কমলগঞ্জ উপজেলায় পরেছে, খুব সুন্দর দুইটা ঝর্না, তবে তার জন্য আলাদা একদিন লাগবে আর এইটা সবার জন্য নয় , যারা ট্রেকিং করতে পারবেন , একটানা ২-৩ ঘন্টা পাহাড়ি পথে, ঝিরি পথে হাটতে পারবেন তারা বর্ষা মৌসুমে একদিন সময় বাড়িয়ে যেতে পারেন হামহাম ঝর্নায়।ভাল লাগবে নিশ্চিত। শ্রীমংগল শহর থেকে প্রায় দেড় ঘন্টা লাগে রাজকান্দি রিজার্ভ ফরেষ্ট দিয়ে কলাবন পাড়ায় যেতে। সেখান থেকে প্রায় দুই ঘন্টা ট্রেকিং করে যেতে হয় হামহাম ঝর্নায়। এই এরিয়ায় সিতাপ ছাড়া আরো কিছু ঝর্না আছে যা বেশ দূর্গম। গেলে অবশ্যী কলাবন পাড়া থেকে গাইড নিয়ে যাবেন। তার খরচ ৩০০-৫০০ টাকা। 
২। অনেকে শীত মৌসুমে বাইক্কা বিলে যায়, গাড়ী রিজার্ভ করে মাধবকুন্ড, পরিকুন্ড, হাকালুকি হাওড়েও যাওয়া যায়।


অতি সংক্ষেপে শ্রীমঙ্গলের কিছু দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা দিলাম, এগুলর সবকয়টাতেই আমার যাওয়া হয় নি তাই বিভিন্ন ব্লগ থেকে তথ্যগুলো দিলাম।

অনেক জল্পনা আর কল্পনার পর গত ২০শে সেপ্টেম্বর চেপে বসলাম সিলেটের বাসে। ভ্রমন সাথী আমি সহ চার জন। বাস শ্যামলী। রাত সাড়ে ১১ টার বাসের দেখা মেলল রাত ১টার সময়। পরে এইটাই যে শাপে বর হবে আগে বুঝি নাই। সেকথায় পরে আসছি। বাস ফকিরাপুল থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় সায়েদাবাদ। পরে সেখান থেকে শ্রীমঙ্গলের বাস। বাস ছাড়ার পর আমি সারা পথ জেগেই থাকি...বাস চালানো আর ওভারটেক গুলা দেখতে ভালো লাগে বলে। এই পথের সবচেয়ে সুন্দর দৃশ্য হলো বাস যখন হবিগঞ্জের রোডে ঢুকে। শাপের মত আঁকাবাঁকা রোড... ড্রাইভারের দক্ষ হাতের প্যাঁচ... আর রাস্তার দুই পাশের অপরূপ দৃশ্য...ঘুমিয়ে থাকলে পুরাটাই মিস !!!


যাই হোক শ্রীমঙ্গল শহরে যখন নামলাম তখন কেবল ৬টা বাজে। রাস্তার পাশের কুকুর গুলা কেবল চার হাত পা সামনে-পিছনে টেনে আড়মোড়া ভাঙছে। তখনই বুঝলাম...বাস যদি সাড়ে ১১টা ছাড়ত... তাহলে কই যাইতাম এত্ত রাতে... ভাবতেই সব রাগ পানি হয়ে গেল। নেমেই নাস্তা করার জন্য ছুটলাম। অর্ডার দিলাম পরোটা, ডাল-ভাজি আর ডিম। অর্ডার আসার পর চক্ষু ছানাবড়া। ঢাকাতে নাস্তা করতে গেলে জিজ্ঞাস করি যে মুগের ডাল আছে কিনা... আর এখানে না চাইতেই ঘন মুগ ডাল!!! বিশ্বাস করবেন না অনেক দিন পর সকালের নাস্তায় কবজি ডুবিয়ে খেলাম। খাওয়ার শেষে চা। 


নাস্তা শেষ করে বের হলাম সিএনজি ঠিক করার জন্য। সিএনজি ড্রাইভার গুলা পিঠে ব্যাগ দেখলেই ভাড়া চেয়ে বসে ৪ গুন বেশী। আমাদের প্রথম দিনের টার্গেট ছিল শ্রীমঙ্গল শহরের সব কিছু একদিনে কাভার করব। সেই অনুযায়ী যখন বললাম যে মাধবপুর লেক, লাউয়াছড়া, শমসের নগর গলফ মাঠ আর BTRI ...ভাড়া শুনে চক্ষু চড়াক গাছ !!! পরে দামাদামি করে মাধবপুর লেক আর শমসের নগর গলফ মাঠ ঠিক করলাম ৭০০/- তে। যাওয়ার পথে মামা বলে যে আপনারা চাইলে লেমন গার্ডেন, টি গার্ডেন আর আনারসের বাগান যাইতে পারেন। ভাড়া আমাদের যেটা ভালো লাগে তাই দেয়ার জন্য বলল। একটু দ্বিধায় পরে গেছিলাম আমরা যে কোন খারাপ মতলব আছে কিনা। পরে আল্লাহর নামে রাজি হয়ে গেলাম। যাওয়ার পরে বুঝলাম যে আসলেই না আসলে অনেক সুন্দর কিছু যায়গা দেখা হত না। 

পথে প্রথমেই পড়ে আনারস বাগান। রাস্তার দুই পাশের টিলা গুলাতে আনারস লাগানো। বাগানে ঢুকলে সাবধানে ঢুকবেন কারন আনারস গাছের পাতা খুবই ধারালো আর পাতার মাথা শক্ত কাটা থাকে। এর পরে গেলাম লেমন গার্ডেনে। রাস্তার দুই পাশে সারিতে সারিতে লেবু গাছ। আপনি চাইলে নেমে লেবু তুলতেও পারবেন একটা-দুইটা অথবা বাগানে কাজ করছে এমন কাউকে বললে সে নিজে থেকেই আপনাকে ৬-৭ টা লেবু তুলে দিবে। তবে লেবু না তোলাই ভাল কারন তাহলে অন্যের পেটে লাথি মারা হবে। যাই হোক এর পর শুরু হলো মাইলের পর মাইল শুধু চা বাগান। চা বাগান দেখেই আমরা ছবি তোলার জন্য অস্থির হয়ে গেছিলাম। মামা বলল যে সামনে আরো সুন্দর চা বাগান আছে...ওইখান থেকে ছবি তুলতে। পরে দেখলাম যে আসলেই... যত সামনে যাচ্ছি ততই চা বাগান সুন্দর থেকে সুন্দরতর হচ্ছে। পরে চা বাগানে নেমে আমরা মনের খায়েশ মিটায়ে ছবি তুললাম। এই পথে একটা রাবার বাগানও পরে...তবে আমরা আর ঢুকি নাই... 


এই চা বাগানের মধ্যে দিয়ে গেলেই সামনে পরে মাধবপুর লেক। লেকের গেট খুলে সকাল ৯টায়। আমরা পৌছাইছি ৮ টার দিকে। গেটের দারোয়ানকে চা খাওয়ার টাকা দিয়ে আমরা ভিতরে ঢুকলাম। গাইডের কোন দরকার নাই তারপরও আমাদের সাথে একজন গাইড দিয়ে দিল। সাত সকালে এত্ত পানি দেখে আমি আউলায়ে গেছিলাম। গাইডের ভাষ্যমতে এই লেক লম্বায় প্রায় সাড়ে ৩ মাইল আর গভীরতা প্রায় ১৩৫ ফুট। মাঝে মাঝে স্থানীয়দের জালে মাছ ধরা পরে। তবে এখন পর্যন্ত কোন মাছের ওজনই নাকি ৬০ কেজির কম ছিল না। গত সপ্তাহে একটা মাছ ধরা পরছিল যার ওজন ছিল ৯৫ কেজি। এই পাড়ে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আমরা পাশেই একটা টিলাতে গেলাম ঘুরার জন্য। গাইড বলল যে মাঝে মাঝেই এখানে হরিণ পাওয়া যায়। আর আমাদের দাওয়াত দিয়ে দিল যেন কার্তিক মাসে একবার যাই। তাহলে স্থানীয় চা শ্রমিকদের সাথে পূজা দেখতে পারব আর ওই সময় লেকের সৌন্দর্যও নাকি অনেক গুণ বেড়ে যায়।


লেক থেকে বের হয়ে গেলাম শমসের নগর গলফ মাঠে। এটাকে নাকি গুলটিলাও বলে তবে আমরা গুলটিলা বলার পর স্থানীয় কেউ চিনতে পারে নাই। গলফ মাঠ বলার পর সবাই চিনছে। আসলেই সুন্দর একটা যায়গা। আহামরি নতুন কিছু যে দেখতে পাবেন... তা কিন্তু না। সেই আগের মতই চা বাগান, গলফ মাঠ আর নিচে ছোট্ট একটা ঝিরি... এই সব কিছুই এই যায়গাকে আনন্য সাধারন করে তুলেছে। এখানেও বেশ কিছু সময় কাটানোর পর আমরা সিএনজি তে উঠলাম। তখন কেবল ঘড়ির কাটায় ১১ টা। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে যেহেতু হাতে সময় আছে অতএব লাউয়াছড়া কাভার করে শহরে ব্যাক করব। লাউয়াছড়ার সামনে যেয়ে আমরা সিএনজি ছেড়ে দিলাম। সবকিছু মিলায়ে ১১০০ টাকা দিছি। টাকা পাওয়ার পর ক্যাকু করতেছিল কিন্ত আমরা পাত্তা দেই নাই।


টিকেট কেটে বনে ঢুকে পরলাম। গাইড নেয়ার কথা বলবে। কোন দরকার নাই। বনের মাঝেই সুন্দর রাস্তা বানানো আছে। নিজেরা গেলেই বেশী মজা করতে পারবেন। বনে ঢুকে কিছুদুর গেলেই ট্রেন লাইন। আর এই ট্রেন লাইনে বসে ছবি না তুললে নাকি আসার অর্ধেক কাজ বাকি থেকে যায়... কি দরকার অর্ধেক কাজ বাকি রাখার। প্রায় দেড় ঘন্টা বনে ঘোরার পর আমরা বের হয়ে আসলাম বন থেকে। এইখান থেকে শ্রীমঙ্গল শহরে সিএনজি রিজার্ভ পাওয়া যায়। ভাড়া নেয় ১৫০ টাকা। শহরে এসেই চলে গেলাম মহসীন প্লাজাতে। রুম ভাড়া করে গোসল করে বের হলাম পানশীর উদ্দেশ্যে। শুধু ভর্তা আর ডাল দিয়ে খেয়ে যে নড়াচড়া করা যায় না... তা এখানে খেয়ে বুঝলাম। সবচেয়ে অসাধারন ভর্তা হলো শুটকি ভর্তা। আর এতটাই ঝাল আর এতটাই সুস্বাদু যে মাথা দিয়ে ঝালে ঘাম বের হয়ে যাবে কিন্ত তার পরেও আপনি খাওয়া বন্ধ করতে পারবেন না। আর শেষে পানশী স্পেশাল চা।এটার স্পেশালিটি গোপন করলাম যারা যাননি তাদের জন্য। কথা দিতে পারি আপনি আরো দুই কাপের অর্ডার করবেন শুধু নিজের জন্য।


হোটেলে ফিরে এসে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে বের হলাম BTRI, নীলকন্ঠ আর বধ্যভূমি যাওয়ার জন্য। রিকশা ঠিক করেছিলাম প্রথমে BTRI, তারপর নীলকন্ঠ আর সেখান থেকে বধ্যভুমি নিয়ে আসবে। ভাড়া ১৫০ টাকা। নীলকণ্ঠ হলো সাতরঙ্গা চায়ের জন্য বিখ্যাত। এখানেরটাই আসল সাতরঙ্গা চা। চায়ের অর্ডার দেয়ার পর ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। অবশ্য ভীড় কম থাকলে ৫-৬ মিনিটের মাঝেই পাওয়া যায়। বধ্যভূমিতে অনায়াসেই রাত ১০টা পর্যন্ত সময় কাটানো যায়। আমরা অবশ্য এতক্ষন ছিলাম না। আমরা ৯ টার দিকে বের হয়ে সরসরি পানশীতে চলে গেছিলাম পেট পূজা দিতে। পেট পূজা দেয়ার পর টলতে টলতে হোটেল।


অতি সংক্ষেপে শ্রীমঙ্গলের কিছু দর্শনীয় স্থানের বর্ণনা দিলাম, এগুলর সবকয়টাতেই আমার যাওয়া হয় নি তাই বিভিন্ন ব্লগ থেকে তথ্যগুলো দিলাম।


লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট

লাউয়াছড়া রেইন ফরেস্ট 
শ্রীমঙ্গল থেকে ভানুগাছ-কমলগঞ্জ রাস্তায় ৭ কিলোমিটার এগুলেই লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান।শ্রীমঙ্গল থেকে আপনি রিক্সায় বা গাড়িতে যেতে পাবেন .বাংলাদেশের অন্যতম সংরক্ষিত বন৷এখানে রয়েছে নানা প্রকার বৃরাজি। দেশের আর কোথাও একই সাথে এত বৈচিত্র্যময় বৃ দেখা যায় না। ঘন জঙ্গলের ফাকে প্রচুর বানর এবং পাখি দেখতে পাওয়া যায়৷ বনে বাঘ, অজগর, হরিন দেখতে পাওয়া যায় বলে শোনা যায়৷ টিলার উপরে কিছু রেস্টুরেন্ট আছে৷ এশিয়ার এক মাত্র ক্লোরোফর্ম গাছ এখানেই আছে যার বাকল এর গন্ধ নিলে অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার ভয় থাকে৷ ৫০ টাকা দিয়ে হাতির পিঠে ওঠার সুযোগ আছে৷ লাউয়াছড়া ন্যাশনাল পার্কেই রয়েছে দেশের পূর্বাঞ্চলের একমাত্র ভেষজ বাগান আরোগ্য কুঞ্জ। মাগুর ছড়া গ্যাস কুপ পেরিয়ে প্রায় আড়াই কিঃমি পথ এগুলোই হাতের ডানদিকে চোখে পড়বে ভেষজ বাগান আরোগ্য কুঞ্জ। পার্কের ২ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত এ ভেষজ বাগানে রয়েছে ৭৯ প্রজাতির ঔষধী গাছ। লাউয়াছড়ায় একটা খাসিয়া পল্লী আছে।

শ্রীমংগল শহর থেকে ২০-৩০ মিনিট লাগবে সিএনজি অথবা অটো করে যেতে , টাকা নিবে ১৫০-২০০ টাকা। এইখানে চাইলে ঘন্টা দুই সময় কাটাতে পারেন। ঢূকতে টিকিট কাটতে হবে । পার হেড ২৩ টাকা (১৮/০৮/২০১৬)। লাউয়াছড়ার ভেতর দিয়ে চলে গিয়েছে ট্রেন লাইন। লাউয়াছড়ায় ঢুকে সোজা সেখানে চলে যেতে পারেন। কিছু সময় ছবি উঠিয়ে এইবার চলে যান বনের গভীরে। দুই পাশ এ বন , মাঝখান দিয়ে আকা বাকা রাস্তা। এমন কয়েক টা বন্য ট্রেইল রয়েছে লাউয়াছড়ায়। কাউন্টারে হয়ত আপনাকে গাইড নিতে বলবে , ট্রেইল ভেদে যার ফিস ১০০-৫০০ টাকা। আপনি যদি সাহসী হন তাহলে গাইড ছাড়াই যেতে পারেন।চুপ চাপ নির্জনতার মাঝে ঘন্টা খানেক হাটতে খুব ভাল লাগবে সেটা আপনাকে বলতে পারি। ভাগ্য প্রসন্ন থাকলে দেখা পেতে পারেন বন্য প্রানীর। অনুরোধ থাকবে বনের গভীরে গিয়ে হৈ চৈ করবেন না।


BRTI

বাংলাদেশ চা গবেষনা ইনস্টিটিউট
চারদিকে বিচিত্র সব ফুলের আয়োজন। সারিবদ্ধ পাম, ইউক্যালিপটাস, একাশিয়া ইত্যাদি বৃরাজির শোভা। লেকের জলে ফুটন্ত জলপদ্ম। তারই মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই)। প্রকৃতি আর মানুষের হাতের ছোঁয়া গড়ে ওঠা এলাকাটির সৌন্দর্য্য নিঃসন্দেহে যে কাউকে মুগ্ধ করবে। চা গবেষনা ইনস্টিটিউট ছাড়াও এখানে রয়েছে একটি চা কারখানা। কর্তৃপরে অনুমতি নিয়ে বিজ্ঞানাগার ও চা কারখানায় চা প্রক্রিয়াজাতকরণ দেখার সুযোগ রয়েছে।

লাউয়াছড়া থেকে বের হয়ে আরেকটা সিএনজি ভাড়া করে চলে যান চা গবেষনা অফিসে। মুলত এইটা সরকারী প্রতিষ্টান। অফিস টাইমে ভেতরে ঢূকতে দিতে চায়না ।কিন্তু মেইন গেটের মামুদের সাথে খাতির করে ভেতরে যাওয়া যায়। খুব সুন্দর পরিপাটী করে সাজানো এর ভেতর টা।চা নিয়ে অনেক তথ্য জানতে পারবেন।ভেতরের নয়নমনোহর পরিবেশে ঘণ্টা খানেক সময় কাটাতে পারেন, ভাল লাগবে আশা করছি। এবার লাঞ্ছের সময়।শ্রীমংগল শহরে বেশ কিছু রেষ্টূরেন্ট থাকলেও আমার পছন্দ ওয়ান আন্ড অনলি পানশী রেষ্টুরেন্ট, কম খরচে ভাল দেশী খাবার খেতে পানশীর বিকল্প নেই। শ্রীমংগল শহরের খুব কাছেই এর অবস্থান।লাঞ্চ করে নিজ নিজ হোটেল অথবা রিসোর্টে বিশ্রাম নিয়ে নেন কিছুক্ষন।

৮ রঙা চা

নীলকন্ঠ চা কেবিনের ৮ রঙা চা
রীতিমতো অবিশ্বাস্য। বিস্ময়করতো বটেই। এক কাপে ৮ রঙা চা! এটি উদ্ভাবন করেছেন রমেশ রাম গৌড়।শ্রীমঙ্গল শহরের কালিঘাট রোড ধরে এগিয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের রাস্তায় যেতে বাম দিকে চেখে পড়বে বিজিবি’র ১৪ রাইফেলস ব্যাটালিয়ন সদর দপ্তর এলাকায় মিনি পার্কের আদলে গড়ে উঠা ‘নীলকন্ঠ চা কেবিন। এখানে পাবেন ১০ লেয়ারের চা। প্রতি কাপের দাম পড়বে ৩ টাকা থেকে ১শ’ টাকা পর্যন্ত্ ।একই রাস্তা ধরে এগিয়ে গেলে ফুল ছড়া চা বাগান ঘেষে রমেশের আরেকটি চা দোকান রয়েছে। মনিপুরী পাড়ায় প্রবেশ পথে নীলকণ্ঠ চা কেবিনে একই ধরনের চা পাওয়া যায় ।পোরের টা তে যাবার চেষ্টা করুন চা বাগানের মাঝে খুব সুন্দর পরিবেশ। 

ডিনস্টন সিমেট্রি
শতবর্ষের স্মৃতিবিজড়িত ডিনস্টন সিমেট্রি। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রায় ১৫কিলোমিটার দূরে ডিনস্টন চা বাগানে এর অবস্থান। পাহাড়টিলায় ঘেরা চিরসবুজ চা বাগানের ভেতর সুনসান নিরবতার মাঝে ডিনস্টন সিমেট্রিতে ঘুমিয়ে আছেন ৪৬জন বিদেশী নাগরিক।

ভাড়াউড়া লেক
চারদিকে চা বাগান মাঝখানে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে একটি লেক। লেকে রয়েছে জলপদ্মের মেলা।দেখবেন শাপলা ফুল পরিপূর্ণ লেকটিতে হরেক রকম পাখির সমাহার। লেকের শাপলা ফুলগুলোর দিকে তাকালে মনে হবে সবুজের মধ্যে লালের ছোঁয়া। তবে এ লেকে যেতে হলে পাহাড়ের গা বেয়ে একটু হেঁটে যেতে হবে। হেঁটে চলার পথটি এতোই সুন্দর যে, হাঁটার কান্তি আপনিই ভুলে যাবেন।

ওফিং হিল
চমৎকার একটি জায়গা অফিং হিল। শ্রীমঙ্গল শহর থেকে প্রথমে কালিঘাট চা বাগানে পৌঁছান। সেখানে থেকে হাতের বাম দিকে ইটা বিছানো রাস্তায় এগিয়ে যান। চা বাগান আর রাবার বাগানের মাঝ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ২০ মিনিটের মধ্যে পেয়ে যাবেন হুসনাবাদ চা বাগান। ইচ্ছে করলে গাড়িও নিতে পাবেন, সেখান থেকে হেঁটে আগর বাগানের দিকে এগিয়ে যান আগরের বাগান পেরুলেই দেখতে পাবেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য। মনে হবে যেন ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে পৌঁছে গেছেন। আর একটু এগুলোই পাহাড়ের ভিতরে পাবেন একটি লেক। শাপলা, জলপদ্মে ভরা লেকটির এক পাশ থেকে অপর পাশে দেখবেন শত শত পাকৌড়ি আর সরালী ভাসছে। লেকটি এঁকে-বেঁকে অনেক দুর চলে গেছে। একটু দুর বিধায় এ লেকে পর্যটকদের ভীড় হয় কম। লেকটির কাছে গেলে মনে হবে এটিকে যেন আপনিই আবিষ্কার করেছেন। এখানে আপনা আপনিই কেটে যাবে বেশ কিছুটা সময়।

যজ্ঞ কুন্ডের ঝর্ণা
শ্রীমঙ্গলে এসে শুধু সবুজের ছোঁয়া নিবেন তাতো হয়না একটু পানির ছলছল শব্দ শোনাওতো দরকার। তাই চলে যান শহরের কাছাকাছি জাগছড়া চা বাগানের ১৪নং সেকশনে যজ্ঞ কুন্ডের ধারায়। সেখানে রয়েছে অপরূপ সৌন্দর্য সমৃদ্ধ শ্রীমঙ্গলের একমাত্র ঝর্ণা। যারা এ ঝর্ণাকে প্রথম দেখবেন তারা অবশ্যই বিস্মিত হবেন। এটিও অপরূপ একটি সৃষ্টি। ঝর্ণাটি দেখতে আপনি শ্রীমঙ্গল শহর থেকে মৌলভীবাজার রোড হয়ে কাকিয়াবাজার নেমে ডান দিকে জাগছড়া চা বাগানে যাবেন অথবা শ্রীমঙ্গল শহর থেকে ভাড়াউড়া ও সোনাছড়া চা বাগান হয়ে মেটো রাস্তায় জাগছড়া চা বাগানে গিয়ে যে কাউকে জিজ্ঞেস করে আপনি চলে যাবেন জাগছড়ার ১৪নং সেকশনে। সেখানে চোখে পড়বে একটি ব্রিজ। ব্রিজের ডান পাশ দিয়ে ছড়ার পাড় ধরে একটু সামনে এগিয়ে গেলেই শোনতে পাবেন শা শা শব্দ। নেমে পড়বেন পাহাড়ী ছড়ায় দেখবেন কোন যাদুকর মাটিতে অপরূপ কারুকাজ করে পানি প্রবাহের পথ করে দিয়েছেন।

নির্মাই শিববাড়ী
শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী নির্মাই শিববাড়ী ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে একটি আকর্ষণীয় স্থান। এখানে শিব মন্দিরের পাশেই রয়েছে ৯ একর জায়গা জুড়ে বিশাল একটি দিঘী। দিঘীর চারপাশে বিশাল এলাকাজুড়ে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির বৃসারি। এই দিঘীর পাড়ে বৃসারির নিচে বসে আড্ডা কিংবা গল্প করেই আপনি কাটিয়ে দিতে পারেন অনেকটা সময়। নির্মাই শিববাড়ীর আশেপাশের প্রবীন ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে আপনি জেনে নিতে পারেন এই মন্দিরের ইতিহাস।

মাধবপুর লেক
শ্রীমঙ্গল এর কমলগঞ্জ এ আছে এই লেক৷ সবসময় শতশত পদ্ম আর শাপলা ফুটে থাকে৷ এখানে একটা পার্ক আর পিকনিক স্পট আছে৷ পাশের টিলার উপর থেকে শ্রীমঙ্গল এর চা বাগান এর বিস্তৃতিটা ভালো মত বোঝা যায়৷ এখানকার মনিপুরি পাড়াতে ঘুরে আসা যায়৷ তাদের শিল্পকলার সাথেও পরিচিত হওয়া যায়৷ চা পাতা দিয়ে তৈরী আলাদা আর মজাদার বিভিন খাবার পাওয়া যায়৷মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার কাঁঠালতলী থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত মাধবকুন্ড।

বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এর সমাধি
মাধবপুর লেক থেকে বর্ডার এর দিকে গেলে বি ডি আর চেক পোস্ট আছে৷ ওখানে বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান এর সমাধি আছে৷ সীমানা জটিলতায় ভারতের অংশে তার কবর টা পড়ে গেলে আবার সেখান থেকে এনে এই চেকপোস্ট এর এখানে সৌধ তৈরী করা হয়৷ একটু সামনে গেলেই দেখা যাবে চা গাছ এর চারা তৈরী হচ্ছে আর ছোট একটা খাল দিয়ে ভাগ করা বাংলাদেশ- ভারত সীমান্ত৷

আদমপুর বন
দুই টিলার মাঝখান দিয়ে চলে গেছে পায়ে হাঁটাপথ। এই জঙ্গলের সৌন্দর্য দেখতে চাইলে যেতে হবে কমলগঞ্জ।সিলেট বন বিভাগের অধীন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। এ বনেরই একটি বিটের নাম আদমপুর। সীমান্ত ঘেঁষা এ জঙ্গলের পরেই ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য।স্থানীয়রা এ বনকে আদমপুর নামে কমই চেনেন। তাদের কাছে এটি কাউয়ার গলা বন নামেই বেশি পরিচিত। রাজকান্দি সংরক্ষিত বনাঞ্চলের চারটি বিটের মধ্যে আদমপুরই সবচেয়ে বড়। আয়তনে ১৩ হাজার ৮০ একর। বনটি চলে গেছে একেবারে ভারত সিমান্ত পর্যন্ত।বেশিরভাগই উঁচুনিচু টিলা জুড়ে আদমপুরের জঙ্গল। বড় বড় গাছের নিচ দিয়ে চলে গেছে হাঁটাপথ। কোথাও কোথাও দুই টিলার মাঝখান থেকেই চলে গেছে পথ। চলতে চলতে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় বানর। আরও আছে মুখপোড়া হনুমান, চশমা হনুমান, উল্লুক, মেছো বাঘ, মায়া হরিণ ইত্যাদি।

এ বনে উল্লুক দেখা যায় কদাচিৎ। তবে গভীর বনে এদের চেঁচামেচি শোনা যায়। আর একটু গভীর বনে গেলে চশমা হনুমান ও মুখপোড়া হনুমানদের দেখা যায়। এছাড়া এ বনে আছে ভালুক। এদেরও দেখা যায় না বললেই চলে। তবে মাঝে মধ্যে এদের আক্রমণের খবর পাওয়া যায়। এছাড়া নানারকম পাখিও দেখা যায় এ বনে।

আদমপুর বনের ভেতরেই আছে বড় বড় বাঁশ মহাল। মুলি, মিটিঙ্গা, ডলু, রূপাই জাতের বাঁশ এ বনে বেশি। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পাহাড়ি ছড়াপথে এ বনের বাঁশ নামানো হয়। আদমপুর বন বেশ নির্জন। মানুষের আনাগোনাও খুবই কম। বনের পাশেই আছে খাসিয়াপুঞ্জি। এখানকার মানুষেরা দৈনন্দিন কাজে বনে যায়। জঙ্গল ভ্রমণের ফাঁকে ঢুঁ মারতে পারেন এই জায়গায়। এছাড়া আদমপুর বনের আগে সড়কের দুইপাশে আছে অনেক আগর বাগান।

প্রথমে যেতে হবে শ্রীমঙ্গল কিংবা কমলগঞ্জ। কমলগঞ্জ থেকে দশ কিলোমিটার দূরের এ বনে যাওয়া যায় অটোরিকশায়। চালককে বলতে হবে কাউয়ার গলা বিট অফিসের কথা। নিজস্ব বাহন নিয়ে গেলে জঙ্গলের একেবারে মুখে যাওয়া যাবে। শুকনা মৌসুমে গাড়ি নিয়ে বনের বাংলোর সামনে যাওয়া যায়।

হাম হাম ঝর্ণা

হাম হাম
বাংলাদেশের সুন্দর জলপ্রপাতগুলোর মধ্যে হাম হাম জলপ্রপাত অন্যতম। হাম হাম জলপ্রপাত মৌলভীবাজার জেলার রাজকান্দি সংরক্ষিত বনে অবস্থিত। এটা এমন একটা জায়গা যেখানে গেলে মুগ্ধ হতে হবে প্রকৃতির বৈচিত্রতা দেখে। সাথে পাবেন দু: সাহসিক যাত্রার অনন্য অনুভুতি। ২০০৯ সালে আবিষ্কৃত এই জলপ্রপাতটি ১৬০ ফুট এর মত উঁচু। হাম হাম যাওয়াটা অতি সহজ নয় । পানি, পাহাড়, ঝিরিপথ পাড়ি দিয়ে যেতে হবে। বর্ষায় গেলে অসাধারণ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন কিন্ত যাওয়াটা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

এটা নিয়ে অন্য এক পর্বে বিশদ ভাবে লেখা হচ্ছে, দ্রুতই পোস্ট দিতে পারব  বলে আশা রাখি।


যেভাবে যাবেন- 
শ্রীমঙ্গল ভারী ব্যাগ-বাগেজ হোটেলে রেখে হালকা ১ টা ব্যাগ এ ১ সেট অতিরিক্ত কাপড় আর হালকা খাবার(বিস্কুট, জুস , পানি ), প্রাথমিক চিকিৎসা, মশার বা কিট এর জন্য অডমস নিয়ে নেবেন। মনে রাখবেন ওখানকার পানিতে জোক আছে।

হামহামের দিকে রওয়ানা দিতে হলে ৬ টার মধ্যে বের হতে হয় শ্রীমঙ্গল থেকে সিএনজি করে গেলাম ভানুগাছি । অইখান থেকে হামহামের জন্য মাইক্রো ভাড়া করতে হবে। পুরোরাস্তা গাড়িতে করে যাওয়া যায় না । গাড়ি চলে চাম্পারানির চা বাগান (ন্যাশনাল টি এর কারখানা পর্যন্ত)।তারপর গাইড নিয়ে হাঁটতে হয় পাহাড়ি রাস্তায় পায়ে আড়াই ঘন্টার মত । চলার পথে পড়বে প্রায় চারটা বাঁশের সাঁকো।

খুব সকালে শ্রীমঙ্গল থেকে একটা জিপ ভাড়া করবেন কলাবাগান বস্তি যাওয়ার জন্য। ওখানে পৌঁছালেই ছোট ছোট ছেলে-মেয়েরা আসবে বাঁশের লাঠি বিক্রির জন্য। ওদের কাছ থেকে হালকা কিন্তু শক্ত একটা লাঠি নিয়ে নেবেন।পথে আপনার উপকারে আসবে।এবার হাঁটার পালা। কলাবাগান বস্তি থেকে একজন গাইড নিয়ে নিতে পারেন। জিপের ড্রাইভারাও অনেক সময় গাইড এর কাজ করে, বলে দেখতে পারেন। কাদা, মাটি, পাহাড়, জঙ্গল ও ঝিরি পথ পাড়ি দিয়ে হাম হাম পৌঁছাতে ৩-৪ ঘন্টা লেগে যাবে। দু’টি পথে যাওয়া যায়। আশা করি গাইড সহজ পথে নিয়ে যাবে। পাহাড় থেকে নামার পর ঝিরি পথে পাথর ও পানির ভেতর দিয়ে হাঁটার সময় সাবধানে হাঁটবেন। দয়া করে পৌঁছানোর পর সময়টা দেখে নেবেন। ঐখানে সময় কখন কোন দিক দিয়ে যাবে বুঝতে পারবেন না। ফেরার সময়টা আগেই ঠিক করে নেবেন।


যারা ঢাকা থেকে সরাসরি হাম হাম যেতে চান তাদের জন্যঃ

ঢাকা থেকে শ্রী্মঙ্গল ট্রেনে যেতে পারেন। উপবন এক্সপ্রেস ভাড়া শোভন ২০০/শোভন চেয়ার ২৪০ রাত ১০টা (বুধবার বন্ধ)। বাস এনা ৪০০ টাকা হানিফ ৩৮০ টাকা (সন্ধ্যা ৬টায় শ্রী্মঙ্গল থেকে ঢাকা)। খরচ কমাতে চাইলে ট্রেনে যেতে পারেন। তবে যাওয়ার ২দিন আগে টিকিট কাটতে হবে। 

শ্রিমঙ্গল থেকে নিতে হবে সি এন জি । আপনি লোকালে চলে যাবেন কুরমাবাজার (ভাড়া পার হেড ৪০/৫০ টাকা)। সেখান থেকে ৪ কি মি দূরে কলাবন, ভাড়া ১৫ টাকা করে। কলাবন থেকেই যাত্রা শুরু। কিছু হাল্কা খবার আর পানি নিয়ে যান। একজন গাইড নিলে সবচেয়ে ভাল হবে। উনি আপনাদের আসার সি এন জি ম্যানেজ করে দিবে সরাররি শ্রী্মঙ্গলের । ভাড়া ১০০ টাকা নিবে পার হেড। হাল্কা ১টা ব্যাগ নিন আর বাকি গুলা গাইড মামাকে বললেই রাখার ব্যবস্থা করে দিবে। 

অনেকে ট্র্যাকিং ৭/৮ কি মি আর অনেক কষ্ট বলে ভয় দেখান । আমার কাছে এটা ৪/৫ কিঃমিঃ মনে হয়েছে ,আমি পথে মাত্র একবার বিশ্রাম নিয়েছি। সবকিছু মিলিয়ে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা হলেই যথেষ্ট। নতুনদের জন্য এই ট্র্যাকিং একটু কষ্ট হবে।


কিভাবে যাবেন শ্রীমঙ্গল?
ঢাকার ফকিরাপুল ও সায়দাবাদ থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, শ্যামলী পরিবহন, সিলেট এক্সপ্রেস ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাস যায় শ্রীমঙ্গল। ভাড়া সাড়ে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা।এছাড়া ঢাকার কমলাপুর থেকে মঙ্গলবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে ছেড়ে যায় আন্তঃনগর ট্রেন পারাবত এক্সপ্রেস। দুপুর ২টায় প্রতিদিন ছাড়ে জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস এবং বুধবার ছাড়া সপ্তাহের প্রতিদিন রাত ১০টায় ছাড়ে উপবন এক্সপ্রেস। ভাড়া ১১৫ থেকে ৭৬৫ টাকা।পারাবত ও জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি ভানুগাছ স্টেশনে থামে। কমলগঞ্জের রেল স্টেশনটিই ভানুগাছে। তবে অন্য কোনো ট্রেনে গেলে নামতে হবে শ্রীমঙ্গল। 

কোথায় থাকবেন?
আদমপুর বনের ভেতরেই আছে বনবিভাগের পরিদর্শন বাংলো। সিলেট বনবিভাগীয় কার্যালয় থেকে অনুমনি নিয়ে এ বাংলোতে রাতে থাকা যায়। এছাড়া সারাদিন জঙ্গলে বেড়িয়ে রাতে থাকতে পারেন কমলগঞ্জ কিংবা শ্রীমঙ্গল। তবে কমলগঞ্জ থেকেই আদমপুরের দূরত্ব কম। কমলগঞ্জে একমাত্র ভালো মানের থাকার ব্যবস্থা সুইজ ভ্যালী রিসোর্ট। শমশেরনগর বিমানবন্দরের পাশে অবস্থিত এ রিসোর্টে সুইমিংপুলসহ নানান ব্যবস্থা আছে। খাবারের মানও বেশ ভালো। সুইজ ভ্যালী রিসোর্টের কটেজগুলোর কক্ষ ভাড়া ২ হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা। যোগাযোগ: ০১৭৮৬৪৯৩৭০০।
শ্রীমঙ্গলে ভালো মানের পর্যটক নিবাস হল— ভানুগাছ সড়কে গ্রান্ড সুলতান গলফ রিসোর্ট (০২-৯৮৫৮৮২৭, ০১৭৩০৭৯৩৫৫২-৭)। এই রিসোর্ট পাঁচ তারকা মানের।এছাড়া ভানুগাছ সড়কে আরও আছে টি রিসোর্ট (০৮৬২৬-৭১২০৭, ০১৭১২৯১৬০০১)। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পাশে আছে লেমন গার্ডেন রিসোর্ট। (০১৭৬৩৪৪৪০০০, ০১৭৫৮৭৭১৪৯২)। শ্রীমঙ্গলের রাধানগরে দুটি রিসোর্ট হল নিসর্গ নিরব ইকো রিসোর্ট (০১৭১৫০৪১২০৭) এবং নিসর্গ লিচিবাড়ি ইকো রির্সোট (০১৭১৬৯৩৯৫৪০)।

কোলাহল মুক্ত পরিবেশে থাকতে চাইলে উঠতে পারেন চা বাগানের ভিতর বিটিআরআই রেস্ট হাউজ অথবা টি রিসোর্ট-এ। এ ছাড়া শ্রীমঙ্গল শহরে ২০টিরও বেশি আবাসিক হোটেল রয়েছে। ভাল দেখে যে কোন একটিতে উঠতে পারেন। ভাড়া মোটামুটি কম। শ্রীমঙ্গল শহরে উখযোগ্য হোটেলগুলো হলো_ টি টাউন রেস্ট হাউজ, নিরালা রেস্ট হাউজ, এলাহী পস্নাজা, হোটেল বিরতি, আল-রহমান, হোটেল মুক্তা প্রভৃতিতে উঠতে পারেন। এছাড়াও সরকারি ও আধা সরকারী সংস্থাগুলোর বেশ কিছু বাংলো রয়েছে এখানে। তবে কর্তৃপক্ষের পূর্ব অনুমতি সাপেক্ষে এখানে ওঠতে পারেন।
টি-টাউন গেষ্ট হাউজঃ ০৮৬২৬৩৭০
মিড লেভেল সেন্ডি হোটেলঃ ০৮৬২২৪৩
টি রিসোর্টঃ ০৮৬২৬২০৭


========================================================================

মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।

শ্রীমংগল সিলেট বিভাগের মৌলভীবাজার জেলার অন্তর্ভুক্ত একটি উপজেলা। ঢাকা থেকে বাসে যেতে ৪-৪.৩০ ঘন্টা সময় লাগে। ট্রেনে যেতে ৫ ঘন্টা সময় লাগে।

Post a Comment

[blogger]

Author Name

{picture#https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1196479430442738} YOUR_PROFILE_DESCRIPTION {facebook#https://www.facebook.com/alwasikbillah} {twitter#https://twitter.com/awasikb} {google#https://plus.google.com/112469283873821392454} {instagram#https://www.instagram.com/awasikb}

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.