চলুন যাই সিলেটের কালা পাহাড়

কালা পাহাড়
শুরুতে, কেন যাবেন কালা পাহাড়?
  • এক দিনের জন্য টপ লেভেলের একটা এক্সপিডিশন করতে পারছেন
  • বান্দরবানের কোন এক্সপিডিশনের চেয়ে কোন দিক থেকে কমতি নেই
  • একটা এক্সপিডিশনের সব নিয়ামকই বিদ্যমান
  • বান্দরবানের আপ-ডাউন বাস ভাড়া যা, তাতেই কালা পাহাড় সামিট করে আসা যায়। (১১০০-১২০০ টাকাতেই হয়ে যাবে।)
  • দেশের উত্তর-পূর্বাংশের সর্বোচ্চ চূড়া কালা পাহাড়
  • বেশ কয়েকটি ট্রেইল ধরেই যাওয়া যায়
  • পরিবেশ একদম বুনো
এক দিনের ট্যুরে যদি আপনি এক্সট্রিম এডভেঞ্চার আর ট্র্যাকিং দিতে চান.........
তাহলে আপনার জন্য কালা পাহাড়ই আদর্শ স্থান। 

সিলেটের পাহাড় শুনলে আমরা যা মনে করি তা হল ছোট ছোট টিলা। আমার ভাবনাতেই তাই ছিল। কিন্তু সত্যি বলছি কালা পাহাড়ের উপরে যখন উঠবেন তখন বিশ্বাস করতে কষ্ট হবে আপনি সিলেট আছেন। একেবারে উপর থেকে নিচে তাকালে দেখা যাবে চারপাশে অসংখ্য ছোট ছোট টিলা আর মধ্যিখানে আপনি রাজার মত অনেক উঁচুতে আছেন।

এটির অবস্থান সিলেটের মৌলভীবাজারের কুলাউরা উপজেলার কারমাদহ ইউনিয়নের বেগুণছড়া পুঞ্জিতে। এটা মূলত খাসিয়াদের গ্রাম। ওরা গ্রামকে "পুঞ্জি" বলে আর বান্দারবনের ওদিকে বলে "পাড়া"। কালাপাহাড় সিলেট জেলার সব থেকে উচু পাহাড় যার উচ্চতা ১০৯৮ ফিট। গ্লোবাল লোকেশন N 24°24.586’ E 092°04.792’

কালা পাহাড় যাবার জন্য রাস্তা একটিই কিন্তু ফেরার রাস্তা দুটি। আপনি যদি আরাম প্রিয় হন তাহলে বলবো রুট নাম্বার ওয়ান বেছে নিতে কেননা এই রুট অবলম্বন করে আপনাকে যেতে আসতে সময় লাগবে মাত্র ৪ ঘণ্টা। আর দ্বিতীয় রুটে যেতে হলে আপনাকে প্রথমে কালা পাহাড় গিয়ে রাজকি চা-বাগান হয়ে ফুলতলি চা বাগান দিয়ে বের হতে হবে। এই রুটে সব মিলিয়ে সময় লাগবে সাড়ে আট ঘণ্টার মত এবং তাতে মোট ৩৫ কিলোমিটারের মত হাটতে হবে। ফুলতলি চা বাগানের গেটে আপনি সিএনজি পাবেন যাতে করে আপনাকে মুল শহরে ফিরে যেতে কোন বেগ পেতে হবে না।

কালা পাহাড় (ট্যুরের বিবরন, কিভাবে যাবেন, যাবতীয় খরচের হিসাব) 

খরচঃ

যাতায়াত মাধ্যমঃ উপবন এক্সপ্রেস বেস্ট অপশন। এছাড়াও আপনি বাসে করে যেতে পারেন, ঢাকা টু কূলাঊড়া => ৪৫০ টাকা। ঢাকা-কুলাউড়া শোভন চেয়ার ৩২০ টাকা, শোভন ২৮০ টাকা।
কুলাউরা-আসগরাবাদ চা বাগানঃ ৪০ টাকা (রিজার্ভ ২২০)
গাইড খরচঃ ৩০০-৪০০ টাকা।

আমাদের রুট ছিলঃ
আসগরাবাদ - বেগুনছড়া পুঞ্জি - আতরগেজি - কালাপাহাড় - কলাউনি দূর - বেলকুমা - পানাই পুঞ্জী - নার্সারি পুঞ্জি - আসগরাবাদ।

এ রুট প্লানে উঠতেই গেছে ৫ ঘন্টা। এদিকে গাইডও পথ ঠিক মত খুঁজে না পাওয়া এক ঘন্টা বেশি লাগে। পুরা ৯/১০ ঘন্টা লাগছে। এক ট্রেইলে উঠেছি আরেক ট্রেইলে নেমেছি।

যেভাবে যাবেনঃ
যেহেতু কালা পাহাড় এক্সপিডিশনে যাবেন, সেহেতু আপনাকে যেতে হবে কুলাউড়া। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য বেস্ট অপশন হল ট্রেন। রাত ৯:৫০ এর উপবন এক্সপ্রেসে উঠে বসুন, ভোর রাতে কুলাউড়া নেমে যাবেন। এছাড়া শ্যামলী, এনা রূপসী বাংলাতেও যেতে পারেন। ভাড়া সম্ভবত ৪৫০-৪৮০ এর মত।

উপবন এক্সপ্রেস ভোর ৫ টার দিকেই আপনাকে কুলাউড়া জংশনে নামিয়ে দিয়ে সিলেট চলে যাবে। দিনের আলো ফুটলেই আপনি চলে যাবেন স্টেশনের একটু পাশেই "মাজার-ই রেস্টুরেন্ট" এ। এ রেস্টুরেন্টের খাবার পরিবেশনকারীদের ব্যবহার যে কাউকে মুগ্ধ করবে। এখান থেকে সকালের নাস্তা সেরে কাউকে জিঙ্গেস করে রবির বাজার সিএনজি স্টেশনে চলে যান বা এখান থেকেই আসগরাবাদ চা বাগানের জন্য সিএনজি রিজার্ভ করে ফেলেন। ২০০-২২০ টাকা পড়বে ভাড়া।

এছাড়া দুই ধাপে ভেঙ্গে ভেঙ্গেও লোকাল সিএনজিতে যেতে পারেন আজগরবাদ চা বাগান। ভাড়া জনপ্রতি ২০+২০ টাকা। সময় ৪০/৪৫ মিনিটের মত।
আসগরাবাদ
Welcome To Asgarbad Tea Estate...

এখান থেকেই মূলত শুরু হবে আপনার ট্রেকিং। আশে পাশে দোকান আছে। শুকনো খাবার আর পর্যাপ্ত পানি নিয়ে নিন। এখান থেকেও গাইড নিতে পারেন অথবা বেগুনছড়া পুঞ্জি থেকেও নিতে পারেন। তবে বেগুনছড়া পুঞ্জি থেকে নেওয়া বেটার।

চা বাগানের ভিতরের রাস্তা ধরে বেগুনছড়া পুঞ্জির দিকে হাঁটা ধরুন। আধ ঘন্টার মধ্যে পৌছে যাবেন। পুঞ্জির হেড লেম্বু দা। চমৎকার একজন মানুষ। উনিই আপনাদের গাইড ঠিক করে দিবেন। এক পথে যাবেন আরেক পথে নেমে আসবেন এমন একটা রুট প্লানে সামিট করবেন। গাইড খরচ ৩০০/৩৫০ টাকার মত।
Asgarbad Tea Estate এর সাইবোর্ডের এরো ধরে এগুলেই হবে। চা বাগানের ভেতরের রাস্তা আপনাকে বেগুন পুঞ্জি পর্যন্ত নিয়ে যাবে। টোটাল ৭ টা সাঁকো পড়বে এবং ৩০-৪০ মিনিটের মত লাগবে।

বেগুন পুঞ্জিতে এসে ঝটপট করে হালকা কিছু খেয়ে, কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে আমাদের ছুটতে হবে কালা পাহাড় জয়ে। যারা গাইড নিবেন তারা এখান থেকে গাইড ম্যানেজ করে নিবেন আর কত দিতে হবে সেটাও ফাইনাল করে নিবেন। যদি কেউ বলে ইনসাফ করে এসে দিয়েন, ভুলেও না। ফি ঠিক করেই আগান।

আর একটি গ্রুপ এর কালা পাহাড় ভ্রমন গল্প আপনাদের সুবিধার জন্য দিয়ে দিলাম, অনেক তথ্য আছে এখানে। 

নববর্ষের প্রথম প্রহরে কুলাউরা বাসস্ট্যান্ডে নামার সাথে সাথে বেশ ভালো শীত আমাদের সবাইকে ঝাকিয়ে ধরে, আরে বাবা এ কি আজিব ব্যাপার ? এই বৈশাখ মাসে কিসের এতো শীত ? যাই হোক হাতে সময় বেশী নেই ভেবে তাড়াতাড়ি একটা সিএনজি ঠিক করে ফেলি। গন্তব্য আজগরাবাদ চা বাগান। আজগরাবাদ নেমে প্রথমে গেলাম বেগুণছড়া পুঞ্জিতে কেননা কালা পাহাড় যেতে হলে ওখানকার আদিবাসীদের লিডার "লেম্বু" দায়ের (01951649881) অনুমতি নিতে হবে। বড়ই সজ্জন মানুষ এই লেম্বু দা। তার বাড়িতে যাবার পরে তিনি আমাদের আপায়্যন করলেন চা এবং বিস্কুট দ্বারা। আর আমাদের বসতে দিলেন তার বাড়ির বৈঠক খানাতে। তিনিই আমাদের গাইড ঠিক করে দিলেন। এবং গাইডের হুশিয়ার করে দিলেন এই যে, আমাদের যাতে কোন প্রকার অসুবিধা না হয়। লেম্বু দ্বা জানালেন যে, গত দুই মাসে আমরাই নাকি প্রথম গ্রুপ যারা কালা পাহাড় দেখতে এসেছি।

ট্র্যাকিং ট্রেইল অসম্ভব সুন্দর, যাত্রা শুরুর সাথে সাথে আপনি পাবেন ঝিরিপথ, তবে এই ঝিরিপথ আপনি যদি বান্দারবনের ঝিরিপথ চিন্তা করেন তাহলে আপনাকে হতাশ হতে হবে, নিরাশ হবেন না আসল সৌন্দর্য একটু পরেই পেতে শুরু করবেন।

ঝিরি পথ আর বাঁশের শাকো পার হয়ে এবার এসে গেলাম মুল রাস্তায়। দুই পাশে সবুজ আর সবুজ সেই সাথে নাম না জানা পাখির ডাক। হটাত সামনের পথ দেখলাম আস্তে আস্তে উঁচুতে উঠা শুরু করে দিয়েছে। দুই ঘণ্টা হাটা শেষ করে এবার গাইড বলে এবার থামেন এটাই কালা পাহাড়ের চূড়া। আমি তো আর একবার এসেছি ...... এটা সেই জায়গা নয়। হটাত আমি অন্য দিকে হাটা শুরু করে দিয়ে দেখি আড়াল থেকে একটা উচু পাহাড় দেখা যাচ্ছে ...... তখন আমি বললাম এটা যদি কালা পাহাড় হয়ে থাকে তাহলে আমি সিলেট জেলার অন্য একটা পাহাড় আবিষ্কার করেছি যেটা কালা পাহাড়ের থেকেও উচু। আর ওইটার আবিষ্কারক আমি নিজে। কালা পাহাড় উঠেছি ভালো কথা ...... কিন্তু ওইটায় না গেলে ক্যামন হয় ? আমি ওইটায় যাবো। দলের সবাই এক কথায় রাজী। কিন্তু গাইড বলল, ওখানে যাবার রাস্তা নাই। শুনে আমি বললাম রাস্তা থাকুক আর নাই থাকুক আমি যামুই যামু। বলে সবাই আমরা ওটার দিকে হাতা শুরু করলাম ......... গাইড বুঝে ফেললো ......... এগুলা বিচ্ছুর দল ...... চিটিংবাজি এদের সাথে চলবে না ......... আদিবাসী নেতার কড়া হুকুম ...... ট্রাভেলারদের সাথে টালটি বালটি চলবে না। করলে খবর আছে। কি আর করার গাইড আমাদের পিছনে পিছনে হাটা শুরু করে দিলো। আসলে গাইড আমাদের যেখানে নিয়ে গিয়েছিল সেটি আসলে কালা পাহাড় নয়। তারপর আনুমানিক আধ ঘণ্টা হাটার পর আসল কালাপাহাড়ের চূড়ায় এসে গেলাম। তপু সামিট নোট গেড়ে দিল। এরপর গাছের ছায়ায় বিশ্রামের পালা, ব্যাগ থেকে একটা স্নিকার চকলেট বের করে সবার হাতে একটা একটা করে ধরিয়ে দিল তপু, আর আমি ব্যাগ থেকে খেজুর বের করে সবার হাতে চারটা করে ধরিয়ে দিলাম। পুরা আট ঘণ্টা ট্র্যাকিং এই ছিল আমাদের রসদ। পাহাড়ের একেবারে চূড়ায় বিশাল বড় বড় মহিষ দেখতে পেয়েছিলাম। ভয় লাগছিল আড়াই ফুটি শিং দেখে। না দেখালাম উল্টা ওরাই আমাদের দেখে ভয় পেয়ে জঙ্গলের ভিতরে ঢুকে গেছে। সাবধান মাঝে মাঝে এদিকে নাকি বন্য হাতি দেখতে পাওয়া যায়। আসবার সময়ে প্রচুর হাতির মল দেখেছিলাম। হাতির সাথে নো মাস্তানি। এবার ফেরার পালা।
নামার সময়ে সব থেকে বিরক্ত লেগেছে পাহাড়ি একধরনের ফুলের রেশম পাপড়ি, নাড়া লাগলেই তা ঝড়ে পড়ে আর শরীরের যেখানে লাগবে শুরু হবে চুলকানি। আর সাথে জোকের অত্যাচার তো আছেই। নামার সময়ে সব থেকে বেশী কষ্ট পেয়েছি পানির ওভাবে। বৈশাখ মাসের দিন, সূর্য মাথার উপরে আর তাপমাত্রা তখন ৩২ ডিগ্রির কাছাকাছি। দলের সব থেকে সবচেয়ে টাফ গাই মেহেদীর অবস্থা করুন। কিন্তু এঞ্জয়মেন্ট কারো থেকে নেই। রাজকি চা বাগানের খুব কাছে এসে একটা খালের মত পেয়েছি যার আছে সচ্চ ঠাণ্ডা পানি আর পানির উপরেই একটা বাঁশের তৈরি বেশ চওড়া একটা ব্রিজ। সবাই এখানে গামছা ভিজিয়ে শরীর মুছে ঠাণ্ডা হয়ে নিলো। ওই খালটা না পেলে কপালে দুঃখ ছিল সবার।
এক সময় রাস্তা শেষ হল ...... জঙ্গলের ভিতরেই পেয়ে গেলাম একটা চায়ের দোকান ...... ওখানে চা আর কলা খেয়ে ক্লান্তি দূর করে আবার হাটা শুরু করে দিয়ে একেবারে রাজকি চা বাগানের গেটে এসে পড়লাম। আর এখানেই আমাদের যাত্রা শেষ।


========================================================================

মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।

Post a Comment

[blogger]

Author Name

{picture#https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1196479430442738} YOUR_PROFILE_DESCRIPTION {facebook#https://www.facebook.com/alwasikbillah} {twitter#https://twitter.com/awasikb} {google#https://plus.google.com/112469283873821392454} {instagram#https://www.instagram.com/awasikb}

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.