সোনাইছড়ি |
সোনাইছড়ির পথে, সোনাইছড়ি ট্রেইল, হাদিফকিরহাট, মিরসরাই, চট্টগ্রাম।
সোনাইছড়ির পথে দেখা পরবে এরকম অসাধারণ সুন্দর সুন্দর বোল্ডারের। সোনাইছড়ি টেইল এর সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য এর পাথুরে পথ আর বোল্ডার। বর্ষায় এ পথের কি অবস্থা হবে ভাবলেই গা শিউরে ওঠে।
আমরা গিয়েছিলাম ২৮/০২/১৭ তারিখে...
সোনাইছড়ি ট্রেইল এ যাওয়ার ইচ্ছে অনেকদিন আগের থেকেই কারন অনেকের কাছ থেকে শুনে আসছি মীরসরাই রেঞ্জ এর দুর্গমতম ট্রেইল। বর্ষায় এর ভয়াবহতা বেড়ে যায় অনেকগুন। তবে এই মৌসুমে ট্রেইলের পানি কম থাকলেও সৌন্দর্য থাকবে আমলিন।
বারৈয়াঢালা অভয়ারণ্যের আওতাভুক্ত বৈচিত্র্যময় এই ট্রেইল পুরোমাত্রায় বুনো এবং পাথুরে! চোখে পড়বে বানর,লেমুর ও সাপসহ নানা বন্যপ্রাণী! আকাশ উঁচু সব নাম জানা-না জানা কাষ্ঠল বৃক্ষ আর আমলকি, বেতফলসহ নানা ফলে ভরা ঝিরির দুপাশের জঙ্গল! এখানকার ঝর্ণার পানি হয়তো এই মৌসুমে পাবো নাহ তবে ঝিরি পথ একেবারেই পানিশুন্য থাকবে নাহ। আরো রয়েছে বাঁদুরে কুম নামের এক সংকীর্ণ অথচ বিস্তৃত গভীর কুম, যার দুপাশের পাথুরে দেয়াল খাড়া ১০০-১৫০ফুট উচু! উপরের গাছপালা ঠিকরে আলো তেমন আসেনা, ভেতরে হাজার হাজার বাঁদুরের ডানা ঝাপ্টানো আর কিচকিচ চিৎকারে কান পাতা দেয়! আর সেইরকম বাজে গন্ধ সৃষ্টি করে রেখেছে ভয়াবহ এক ভুতুরে আবহ!
ট্যুরের ধরনঃ
সেমি ব্যাকপ্যাক। ২রাত যাতায়াত, মাঝে ১দিন ট্রেইল এডভেঞ্চার। পুরোদিন পাথুরে ঝিরিতে হাটা, গোসল, আড্ডা, গান।
খরচঃ
জনপ্রতি ৳৮০০। (তবে কম বেশি হতে পারে। তাই অতিরিক্ত ৳২০০ সাথে রাখতে পারেন।)
যা যা থাকছেঃ
-ঢাকা- সীতাকুণ্ড, লোকাল ট্রেনের টিকেট।
-সীতাকুন্ডু - হাদী ফকির হাট, লেগুনা/সিএনজি ভাড়া।
-৩ তারিখ সকালের নাস্তা। (লোকাল নাস্তা, যা পাই তাই।)
-গাইড
-ট্রেকিং এর সময় হালকা নাস্তা।
-দুপুরের খাবার।
-সীতাকুন্ডু-ঢাকা লোকাল বাস/লোকাল ট্রেনের টিকেট।
যা যা দেখবেনঃ
-সোনাইছড়ী ট্রেইল।( মুলত এই ট্রেইলের নৈসর্গিক প্রাকৃতিক রূপ দেখাই মূল উদ্দেশ্য। ২৮ কিমি ট্রেইলের যতোটুকু দেখা যায়)
- বাদুড় কুম ( বাদুড় গুহা)
ট্যুর প্লানঃ
- রাত ৮:৩০ এর মধ্যেই কমলাপুর স্টেশন থেকে যাত্রা। দেরী করলে ট্রেন মিস হয়ে যাবে, তখন খরচ আরও বেড়ে যাবে।
- ট্রেন থেকে নেমে পরদিন ভোরে নাস্তা করেই হাটা শুরু। সারাদিন পাথুরে ঝিরি পথে হাটতে হবে। বিকেলের আগে ফিরে আসা যাবে সীতাকুণ্ডতে। ঐ দিন রাতের বাসে করে সকাল ৬টার মধ্যেই ঢাকায় ফেরা যাবে।
যেভাবে যাবেনঃ
ট্রেনে চড়ে সীতাকুন্ড নেমে হাদিফকির হাট আসা যায়। সেখান থেকে হাদিফকিরহাট জামে মসজিদ এর গলি ধরে হেঁটে অথবা সিএনজি নিয়ে বড়পাথর যেতে হবে। ওইখান থেকে ট্রেইল শুরু। অথবা ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যেকোনো বাসে উঠে হাদিফকিরহাট বাজারে নেমে যেতে হবে।
হাদি ফকিরহাট গ্রাম শেষে পাহাড়ের শুরু থেকে সোনাইছড়ি ট্রেইল এর শেষ পর্যন্ত শেষ করতে আমাদের সময় লেগেছে প্রায় ৩ ঘন্টা ৷ বলা বাহুল্য সবার মতে এইটা মিরসরাই রেঞ্জের সবচেয়ে কঠিন ট্রেইল৷ বাইজ্জাকুম এর আপস্ট্রিম খুবই কঠিন একটু ভুল হলে ১৫০ নিচের গিরিখাদ এ গিয়ে পড়তে হবে। কিন্তু এই ট্রেইলের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য হচ্ছে এই বোল্ডার গুলা। ১০ ফিটের উপরে উচু উচু বোল্ডারের দেখা মিলবে। সাথে আলো আধারির খেলা, রহস্যময় পরিবেশে হারিয়ে যাওয়া। এই ট্রেইলে তেমন লোকসমাগম হয় না। একটু কঠিন আর পরিচিতির অভাবে হয়ত। এজন্য এখনও ট্রেইলে বুনো ভাবটা আছে। কিন্তু তাও আমরা সোনাইছড়ি ঝর্নার আসে পাশে এনার্জিপ্লাস বিস্কিটের প্যাকেট পেয়েছি।
যা যা নিতে হবেঃ
- ছোট ব্যাকপ্যাক
- এক্সট্রা ১সেট ড্রেস।
- ভালো গ্রীপ করে এমন বেল্টসহ জুতা (চামড়ার জুতা, কনভার্স, কেইডস পরা যাবে না।)
- থ্রী কোয়ার্টার প্যান্ট।
- গামছা, ক্যাপ।
- পানির বোতল।
- ফার্স্টএইড।
- প্রতিটা গ্রুপ ১টা করে চাদর। ( ট্রেনের বগীতে বিছিয়ে বসার জন্য। লোকালে সীট পাওয়া যায় নাহ।)
- পলিব্যাগ
বিঃদ্রঃ
- লোকাল খাবার ও লোকাল যানবাহন ব্যবহার এর ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে।
- পরিশ্রম হবে খুব। কারন পাহাড়ি ট্রেইল পাড়ি দেয়া অতটা সহজ হবে নাহ, তবে অসম্ভব কিছু নাহ। কষ্ট হবে যথেষ্ট তবে ভালোলাগার পরিমানটাই বেশী থাকবে।
- পরিবেশ নষ্ট হয়, এমন কিছু করবেন না।
আসুন প্রকৃতিকে তার রুপে থাকতে দেই। হ্যাপি ট্রাভেলিং!
আহা! এ পথে হেঁটে যেতে চাই সারাজীবন! |
এই পথে কত পাথর! ধুর! |
ছড়ামুখি ঝরনা! |
পাথরে ঢাকা পথ! |
বাদুইজ্জা খুমের ১৫০ ফিট |
রাস্তা! |
========================================================================
মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।
Post a Comment