নিকলী হাওড়, কিশোরগঞ্জ |
ব্যস্ত ঢাকা শহর থেকে মাত্র তিন ঘণ্টার দূরত্বে অবস্থিত অপূর্ব এক জলাভুমি। বর্ষাকাল এখানে বেড়াতে আসার উপযুক্ত সময়। এখানে এসে আপনি শহরের যান্ত্রিক জীবনের সকল ক্লান্তি ও অবসাদকে ধুয়ে ফেলতে পারবেন। হ্যা, আমি কিশোরগঞ্জ জেলার হাওর অঞ্চল নিকলীর কথা বলছি। ভ্রমন পিয়াসু মানুষের জন্য নিকলী হতে পারে এক অভুতপূর্ব অভিজ্ঞতা! ঢাকা থেকে সকালে রওয়ানা হলে সারাদিন ঘুরে আবার বিকালে ঢাকার উদ্দেশ্যে ব্যাক করা সম্ভব। তবে রাতে থেকে রাত এবং সকালের সৌন্দর্য উপভোগ করতে না পারলে মন কিছুটা অতৃপ্তই থেকে যাবে!
বর্ষায় এই হাওরে নৌকা ভাসালে মনে হবে অকূল দরিয়া পার হতে হচ্ছে। কূল নাই কিনার নাই, শুধু অশান্ত ঊর্মিমালা ওঠানামা করছে বিরামহীনভাবে।
নিকলী হাওড় |
কিশোরগঞ্জ জেলা হাওর এলাকা ‘গেইটওয়ে’ নামে খ্যাত। সীমানা দক্ষিণে অষ্টগ্রাম থানা, উত্তরে মিঠামইন, উত্তর-পূর্ব কোণে ইটনা, উত্তর-পশ্চিমে কটিয়াদী, পশ্চিমে নিকলী এবং পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার লাখাই থানা। নিকলী হাওর ছাড়া কিশোরগঞ্জে আরও অনেক হাওর রয়েছে। যেমন হুমাইপুর হাওর (বাজিতপুর), সোমাই হাওর (অষ্টগ্রাম), বাড়ির হাওর (মিঠামইন), তল্লার হাওর (বাজিতপুর-নিকলী-অষ্টগ্রাম), মাহমুদুর হাওর (নিকলী), সুরমা বাউলার হাওর ইত্যাদি।
কিশোরগঞ্জে জেলার আকর্ষণীয় দিক এই হাওরগুলো। কেবল ভূপ্রকৃতিগত বৈচিত্র্যের কারণে নয়, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দৃষ্টিকোণ থেকেও এই হাওর এক বিরাট স্থান জুড়ে আছে। হাওর মূলত সাগর শব্দের অপভ্রংশ মাত্র। উচ্চারণ বিকৃতিতে সাগর থেকে সায়র এবং সায়র থেকে হাওর হয়েছে বলে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে। বর্ষাকালে বিশাল হাওর এলাকায় অথৈ জলরাশি দেখলে সাগরের কথাই মনে করিয়ে দেয়। হাওর আর কিছু নয়, এটা অপেক্ষাকৃত বড় জলাভূমি।
শীতকালে যে প্রান্তর ফসলে পূর্ণ বা শুকনো মাঠ কিংবা বালুচর, বর্ষাকালে সেখানে এমন জলধারা যে চারদিক প্লাবিত করতে পারে, তা না দেখলে বিশ্বাস করা যায় না। শুধু পানির প্রবাহ নয়, প্রচণ্ড ঢেউ আর দিগন্ত বিস্তৃত জলরাশি সাগরের বিশালত্বের কথাই মনে করিয়ে দেয়। দ্বীপের মতো গ্রামগুলো যেন ভেসে আছে পানির বুকে। বর্ষাকালে হাওরের এই পাগল করা ঢেউয়ের দোলায় নৌকার পাল উড়িয়ে চলার সময় উল্টিয়ে পড়ছে যেন! সেই হাওরে নাকি শুষ্ক মওসুমে পানি থাকে না এক ফোঁটা, যতদূর চোখ যায় শুধু ধানের সবুজ শিষ বা সোনারঙা ধানের সুবিপুল সমারোহে ভরপুর হয়ে ওঠে। বর্ষায় এমন থৈ থৈ পানি দেখে সেটা বিশ্বাস করা করা কঠিন। এখানে আরও অবিশ্বাস্য এক রাস্তা আছে, সাবমার্সিবল রোড, বর্ষায় ডুবে থাকে। আর শুকনোর সময় দিব্যি পথ চলার রাস্তা। পানির জন্য এ রাস্তার কোনো ক্ষতি হয় না।
জোসনা রাতে হাওরে নৌকায় ভ্রমন করলে বিদ্যুতবিহীন জোছনামাখা এই হাওর আপনাদের দিবে অপার ভালো লাগা। রাত পেরিয়ে প্রত্যুষের আলো ফুটার সাথে সাথে চারদিকে ঝিলিমিলি নীল আলো দেখতে পাবেন। ঢেউয়ের ছন্দদোলায় মনে হবে রক্তলাল সূর্য একবার পানির নিচে ডুবছে, আবার ভেসে উঠছে। ভোরের আলোয় ছোট ছোট নৌকা নিয়ে হাওরের মাছ ধরছে জেলেরা, আর সেই দৃশ্য দেখে কার না ভাল লাগবে? সে এক অদ্ভুত দৃশ্য! চারদিকে শুধু পানি আর পানি, মাঝে মাঝে পানির ওপর ভাসমান গ্রাম যা আপনাকে হাতছানি দিয়ে ডাকবে!
কিশোরগঞ্জ নিকলী হাওড়ে ঘুরে আসার জন্য আরও কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য।
অনেকেই নিকলী হাওড় যাওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তবে ঘুরে আসার জন্য পরিপূর্ণ তথ্য নেই। দেখলাম অনেকেই অনেক কিছু জানতে চাচ্ছেন। তাই আমি এই পোস্টে সবার উপকারার্থে আরও কিছু তথ্য দিচ্ছি।
হাওড়ে কেনো যাবেন :
জ্যাম, ব্যস্ততা, অফিস, সংসার এমন সব কিছুর ভীড়ে আপনার মাথা যখন প্রায় হ্যাং, তখন এমন একটা জায়গা আপনাকে দিবে পেছনের সবকিছু ভুলে নতুন করে ফ্রেশ হওয়ার সুযোগ। বিশাল জলের উপর ভাসতে ভাসতে নীল রঙা আকাশেল দিকে তাকিয়ে থেকে নিজের মন দেহ সবই হালকা করে নিতে পারবেন। যেহেতু প্রসিদ্ধ পর্যটন জায়গাগুলোতে সবসময়ই পর্যটকদের ভীড় থাকে, তাই এমন অপ্রসিদ্ধ কিছু স্থানে আপনি নিজের মতো করে ঘুরে আসতে পারেন অনায়াসে। সাধরন পর্যটন প্লেসের মতো কোনো ঝামেলা নেই।
পানিতে ভাসতে ভাসতে হাওড়ের ভিতরের দিকে গেলে এক পর্যায়ে যখন কোনো গ্রাম দেখা যাবে না, তখন হাওড়কে আপনার শান্ত একটা সাগরের মতোও মনে হতে পারে। আবার ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়বে পানির উপর ভাসমান অসম্ভব সুন্দর ছোট ছোট সবুজ গ্রাম। নৌকা থামিয়ে গ্রামটি একটু ঘুরে আসতে পারেন। অবাক হবেন মানুষগুলোর কাছে গিয়ে কথা বললে। আপনার কাছে মনে হবে পানির সাথে বসবাস করতে করতে মানুষগুলোর স্বভাব চরিত্রও পানির মতো হয়ে গেছে। বিভিন্ন গ্রামের বাজার থেকে হালকা নাস্তা কিনে নিতে পারেন। খোলা আকাশের নিচে এলোমেলো বাতাসে নৌকার ছাদে খেতে বসলে আপনি পেতে পারেন অদ্ভুত এক খাওয়ার আনন্দ। বাজে রকম কোনো খাবারও তখন আপনার কাছে সুস্বাদু মনে হতে পারে।
দেখে আসুন আরেক রাতারগুল:
হাওড়ে ঘুরতে ঘুরতে চলে যাবেন ছাতিরচরে। পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ বন। লেয়ারে লেয়ারে সাজানো সুবজ গাছ। গাছের বুক বরাবর পানিতে ভাসতে থাকবেন আপনি। হুট করে দেখে আপনার কাছে মনে হতে পারে এটা আরেক রাতারগুল। নিকলী বেড়িবাধ থেকে নৌকায় সরাসরি ছাতিরচর যেতে ঘন্টাখানেক সময় লাগে। নৌকায় ৩ঘন্টা ঘুরলে আপনার মোটামোটি অনেকটা জায়গা ঘুরে আসতে পারবেন।
নৌকা ভাড়া :
সাধারনত এক ঘন্টার জন্য তারা ৭০০/৮০০ টাকা নেয়। আবার কয়েকঘন্টার জন্য নিতে পারেন প্রতি ঘন্টায় ৫০০টাকার মতো করে। এবং অবশ্যই ভাড়া নিয়ে দামাদামি করে নিবেন। এতে আরও কমতে পারে। নৌকাগুলো বেশ বড়সড়ও হয়। ১৫/২০জন পর্যন্ত অনায়াসে নাচানাচি করে ঘুরে আসতে পারবেন নৌকায়। নৌকার সাইজ অনুযায়ী ভাড়া খুব একটা কমবেশি হয় না। অতএব বড় নৌকাটা নেয়াই ভালো।
নিকলিতে খাবারের ব্যবস্থা :
মূলত নিকলীতে ভালো মানের খাওয়ার ব্যবস্থা নেই। তবে বাজারে বেশ কয়েকটা রেস্তোরা আছে, মোটামোটি কোয়ালিটিতে তাজা মাছের রান্না দিয়ে খেতে ভালোই লাগবে। এছাড়াও বেড়িবাধে প্রবেশ করার সময়ই একটা রেস্তোরা পড়ে আর সেই রেস্তোরায় নদীর তাজা মাছের মজাদার খাবার খেয়ে নিতে পারেন।
রাত কাটাতে পারেন নৌকায় :
ভরপুর কোনো পূর্ণিমা রাতের গাঢ়ো নীলচে আকাশের নিচে নৌকার ছাদে কাটিয়ে দিতে পারেন আস্ত একটি রাত। ওখানে রাতে থাকাটা মোটামোটি নিরাপদ। যদি আবহাওয়া ভালো থাকে। তবে পুরোপুরি নিরাপত্তার জন্য নিকলি থানায় ইনফর্ম করে নিতে হবে। তাহলে চিন্তামুক্ত ও আরামদায়ক একটি রাত কাটাতে পারবেন আপনি। এবং রাতে অবশ্যই বেরিবাধের কাছাকাছি কোনো স্থানে অবস্থান করতে হবে। যদিও নিকলীতে থাকার কোনো সুব্যবস্থা নাই, তবে ইমার্জেন্সি থাকার প্রয়োজন হলে নিকলী থানা পুলিশে আওতায় একটি ডাকবাংলো আছে। পুলিশেল সাথে কথা বলে সেখানে ব্যবস্থা করে নিতে পারেন। তবে সেই বাংলোটাও অতোটা ভালো মানের নয়। এটাও যদি না হয়, তাহলে তো হাতের কাছে কিশোরগঞ্জ শহর আছেই।
নিকলী থানার ওসির ফোন নাম্বার
মো. নাসির উদ্দিন- 01713373490
কীভাবে যাবেন :
যদি ভোরে রওনা করে রাতের মধ্যে চলে আসতে চান, তাহলে সবচে সুন্দর পন্থা হচ্ছে পুলেরঘাট দিয়ে যাওয়া। নিকলি হাওড় সবচে বেশি কাছে হয় কিশোরগঞ্জের পুলেরঘাট থেকে। যেতে পারবেন ঢাকা সায়দাবাদের পাশে গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড থেকে 'অনন্যা সুপার' বাসে সোজা পুলেরঘাট। ভাড়া ২২০ টাকা। সময় লাগবে ৩ঘন্টা। পুলেরঘাট থেকে সিএনসি দিয়ে ১ঘন্টায় নিকলী বেড়িবাধ। সিএনজিতে জনপ্রতি ভাড়া ৮০ টাকা। গোলাপবাগ থেকে একদম ভোর থেকেই বাস পাবেন। তবে ভালো থাকা খাওয়ার চিন্তা করলে আপনাকে কিশোরগঞ্জ শহরেই যেতে হবে। নিকলি থেকে কিশোরগঞ্জ শহরে যেতে সিএনজিতে ঘন্টাখানেক লাগে। তাছাড়া নিকলীতে থাকার মতো ভালো ব্যবস্থা নেই।
আর যদি মনে করেন, কিশোরগঞ্জ শহর ও শহরের আশপাশে আরও কিছু ঐতিহ্যবাহী নিদর্শন যেমন ইশাখাঁর বাড়ি, চন্দ্রবতীর মাজার, ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ, ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ, ইত্যাদি ঘুরে আসবেন। তবে আপনি ঢাকা থেকে সরাসরি কিশোরগঞ্জ শহরে চলে যেতে পারেন। কিশোরগঞ্জ শহর থেকেই আবার যেতে পারবেন নিকলী হাওড়ে। রেলস্টেশনের দক্ষিণ পাশ থেকে সিএনজি যায় নিকলীর দিকে। মাথাপিছু ৮০ টাকা ভাড়ায় মাত্র ১ঘন্টায় আপনি নিকলী হাওড় বেড়িবাধে পৌঁছতে পারবেন।
অথবা শহর থেকে চলে যেতে পারেন শহরের খুব কাছেই চামড়াবন্দরে। সেখান থেকেও নৌকা ভাড়া করে ঘুরতে পারেন হাওড়ের আরেক পাশ। শহরের একরামপুর রেলক্রসিং থেকে চামড়াবন্দরে যাওয়ার সিএনজি বা অটো পাওয়া যায়। সিএনজিতে সময় লাগবে আধঘন্টারও কম। ভাড়া মাথাপিছু ৪০-৫০ টাকা।
একটু সময় নিয়ে ও রিল্যাক্সে হাওড়ে ঘুরতে চাইলে কিশোরগঞ্জ শহরে থেকেই ঘুরতে যাওয়া ভালো। তাছাড়া শহরে পাবেন ভালোমানের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা।
কিশোরগঞ্জ শহরে থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা :
কিশোরগঞ্জের শহরের মেইন পয়েন্ট গৌরাঙ্গবাজারের আশপাশেই ভালোমানের বেশ কয়েকটা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত আবাসিক হোটেল রয়েছে।
হোটেল রিভারভিউ আবাসিক
ভাড়া ৬০০-১০০০
ফোন : 01754231267, 0941-61127
হোটেল ক্যাসেল সালাম ইন আবাসিক
ভাড়া ৮০০-১৫০০
ফোন : 01745843422
হোটেল গাংচিল আবাসিক
ভাড়া ৬০০-১০০০
ফোন : (সংগ্রহ করতে পারলে পরে এডিট করে দিবো)
হোটেল উজানভাটি আবাসিক
ভাড়া ৬০০-১০০০
ফোন : (সংগ্রহ করতে পারলে পরে এডিট করে দিবো)
হোটেল নিরালা আবাসিক
ভাড়া ৭০০-১২০০
ফোন : 01759014554
আর খাবারের জন্য শহরের ভেতরে হাতের নাগালেই পাবেন বেশ কিছু ভালো মানের রেস্টুরেন্ট। এর মধ্যে আছে,
হোটেল গাংচিল, স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ।
হোটেল ধানসিড়ি, রথখলা, কিশোরগঞ্জ।
হোটেল স্টার ওয়ান, স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ।
হোটেল ইষ্টিকুটুম, স্টেশন রোড, কিশোরগঞ্জ।
হোটেল দারুচিনি, রথখলা, কিশোরগঞ্জ।
টুইস্ট, খরমপট্টি রোড, কিশোরগঞ্জ।(বেস্ট ফাস্টফুড)
সরাসরি কিশোরগঞ্জ শহর পর্যন্ত যেতে চাইলে :
গোলাপবাগ বাসস্ট্যান্ড বা মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে ভোর থেকে সন্ধ্যার পর পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের বাস পাওয়া যায়। মহাখালি থেকে ছেড়ে যাওয়া কিশোরগঞ্জের বাসগুলো একটু ছোট টাইপের।
অথবা ট্রেনে যেতে পারেন। কিশোরগঞ্জে যাওয়ার সবচে আরামদায়ক জার্নি হচ্ছে ট্রেন। সারাদিনে ৩টি আন্তনগর ট্রেন ঢাকা টু কিশোরগঞ্জ আসা যাওয়া করে।
ট্রেনের সময় সূচি :
ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জ যাওয়ার ট্রেন :
সকাল ৮টায় - এগারো সিন্দুর প্রভাতী।
সকাল ১০টায় - কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস।
সন্ধ্যা ৬টায় - এগারো সিন্দুর গোধূলী।
কিশোরগঞ্জ থেকে ঢাকায় আসার ট্রেন :
সকাল সাড়ে ৬টায় - এগারো সিন্দুর প্রভাতী।
দুপুর সাড়ে ১২টায় - এগারো সিন্দুর গোধূলী।
বিকেল সাড়ে ৩টায় - কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস।
ভাড়া :
শোভন - ১২০ টাকা
শোভন চেয়ার - ১৫০ টাকা
প্রথম চেয়ার - ১৮৫ টাকা
ট্রেনে যেতে সময় লাগবে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা
'শোভন' ক্যাটাগরির সিটটি খুব একটা আরামদায়ক নয়।
সপ্তাহের শেষে এবং শুরুতে ট্রেনে বেশ ভীড় হয়। তবে একটি শোভন চেয়ার পেয়ে গেলে ভীড় খুব একটা গায়ে লাগবে না।
দিনে গিয়ে রাতের মধ্যে আসতে চাইলে ট্রেনে সম্ভব নয়। তাহলে আপনাকে ভোরের বাসেই যেতে হবে।
(ঢাকা থেকে ট্রেনে যেতে চাইলে একদিন আগে স্টেশন কাউন্টারে গেলেই ট্রেনের সিটসহ টিকিট পাবেন। কিন্তু কিশোরগঞ্জ থেকে টিকিট পেতে কঠিন হবে। না পেলে বাসে চলে আসবেন।)
হাতে সময় থাকলে কিশোরগঞ্জে আরও যা যা ঘুরে দেখতে পারেন:
- ঐতিহাসিক জঙ্গলবাড়ী :
ঈশা খাঁর দ্বিতীয় রাজধানী। হাজরাদী পরগনার জঙ্গলবাড়ীতে ঈশা খাঁ তার দ্বিতীয় রাজধানী স্থাপন করেন। অনুপম স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত তিন গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ, দরবারগৃহ ও পরিখাবেষ্টিত দুর্গের ধ্বংসাবশেষ উজ্জ্বল অতীতের স্মৃতি বহন করে। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে ৬ কি.মি. পূর্বে করিমগঞ্জ উপজেলার কাদির জঙ্গল ইউনিয়নে জঙ্গলবাড়ীর অবস্থান। জেলা সদরের একরামপুর মোড় থেকে অটোরিকশা বা পা-চালিত রিকশায় যাওয়া সহজ।
- ঐতিহাসিক এগারসিন্দুর দুর্গ :
এটি মোগল সেনাপতি মানসিংহের সঙ্গে ১৫৯৫ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত ঈশা খাঁর ঐতিহাসিক যুদ্ধের স্মৃতিবাহী যুদ্ধক্ষেত্র। বর্তমানে এই দুর্গের ধ্বংসাবশেষ ছাড়াও নিরগীন শাহ্, শাহ্ গরীবুল্লাহর সমাধি, শাহ মাহমুদের মসজিদ ভিটা ও বালাখানা অবস্থিত যা আজও কালের সাক্ষ্য বহন করে। ব্রহ্মপুত্র নদের বাঁকে অবস্থিত এ এলাকাটি ষোড়শ শতাব্দীতে প্রসিদ্ধ নৌবন্দর হিসেবে খ্যাত ছিল। পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুর ইউনিয়নে এর অবস্থান। জেলা সদর থেকে দূরত্ব ৩০ কি.মি.। যাওয়ার মাধ্যম বাস ও অটোরিকশা।
- সুকুমার রায়ের বাড়ি :
বিখ্যাত ছড়াকার ও শিশুসাহিত্যিক সুকুমার রায়ের পৈতৃক বাড়ি। এটি কটিয়াদি উপজেলার মসুয়া গ্রামে অবস্থিত। জেলা শহরের বত্রিশ সিএনজি স্টেশনের পথ পাড়ি দিয়ে বাকি পথ রিকশায় যাওয়া যায়।
- কবি চন্দ্রাবতীর শিবমন্দির :
বঙ্গের আদি মহিলা কবি চন্দ্রাবতীর স্মৃতিবিজড়িত মন্দির। ষোড়শ শতকের মনসা মঙ্গল কাব্যের বিখ্যাত কবি দ্বিজ বংশীদাসের কন্যা ও বঙ্গের আদি মহিলা কবিরূপে খ্যাত চন্দ্রাবতীর বহু কাহিনী সমৃদ্ধ এ মন্দিরটি খ্রিস্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে নির্মিত। কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের কাচারীপাড়া গ্রামে ফুলেশ্বরী নদীর তীরে কবি চন্দ্রাবতীর সুবিখ্যাত শিবমন্দিরটির অবস্থান। কিশোরগঞ্জ শহর থেকে দূরত্ব ৬ কি. মি.।
- ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ :
আধুনিক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত পাগলা মসজিদটি ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় স্থাপনা হিসেবে খ্যাত। জনশ্রুতি আছে, পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক পুরুষ খরস্রোতা নরসুন্দা নদীর মধ্যস্থলে মাদুর পেতে ভেসে এসে বর্তমান মসজিদের কাছে স্থিতু হন এবং তাকে ঘিরে অনেক ভক্ত সমবেত হন। পাগলের মৃত্যুর পর তার সমাধির পাশে মসজিদটি গড়ে ওঠে বলে কালক্রমে এটি পাগলা মসজিদ নামে পরিচিত হয়। মসজিদটি প্রায় সব ধর্মাবলম্বীর কাছে অত্যন্ত পবিত্র ধর্মীয় কেন্দ্র হিসেবে পরিগণিত। মসজিদটি শহরের হারুয়া এলাকায় অবস্থিত। শহরের যে কোনো স্থান থেকে রিকশায় সহজেই যাওয়া যায়।
- শোলাকিয়া ঈদগাহ :
এশিয়া মহাদেশের সর্ববৃহৎ ঈদগাহ শোলাকিয়া ঈদগাহ সর্বজনবিদিত। এ ঈদগাহে ঈদের জামায়াতে প্রায় তিন লাখ মুসল্লি পবিত্র ঈদের নামাজ আদায় করে থাকেন। কথিত আছে, বহু বছর আগে এই ঈদগাহের একটি জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটেছিল। এ সোয়া লাখ শব্দটিই পরবর্তীতে ‘শোলাকিয়া ঈদগাহ’ নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। শহরের যে কোনো স্থান থেকে রিকশায় খুব সহজেই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে যাওয়া যায়।
- দৃষ্টিনন্দন লেকসিটি :
শত সহস্র বছরের নানা ঐতিহ্যের প্রাণকেন্দ্র কিশোরগঞ্জে সম্প্রতি গড়ে উঠেছে দৃষ্টিনন্দন লেকসিটি। শহরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ গুরুদয়াল সরকারি কলেজের পূর্বপাশে বিস্তৃত এলাকায় অবস্থিত এ লেকসিটির অংশ হিসেবে রয়েছে মুক্তমঞ্চ, একাধিক নান্দনিক সেতু, মিনি পার্ক ও ওয়াচ টাওয়ার। পড়ন্ত বিকেলের হলুদ আলো আর ফুরফুরে হাওয়ায় লেকসিটিতে ঘুরে-ফিরে সময় কাটালে নিঃসন্দেহে মন্দ লাগবে না।
এ ছাড়াও কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের আশপাশে ঘুরে দেখতে পারেন বৌলাই জমিদার বাড়ি, মিঠামইন উপজেলায় অবস্থিত সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে প্রতিষ্ঠিত মোগল স্থাপত্যশৈলীর অন্যতম নিদর্শন দিল্লির আখড়া।
ও হ্যা, কিশোরগঞ্জ শহর থেকে চলে আসার আগে মদনগোপাল অথবা রাজমণী মিষ্টান্ন ভাণ্ডারের অখ্যাত সুস্বাদু রসমলাই খেতে ভুলবেন না কিন্তু। হাওড়ের হাওয়া আর এই রসমলাইয়ের স্বাদ অনেকদিন মনে থাকবে আপনার।
আপনার ভ্রমণ শুভ হোক।
কার্টেসিঃ ভ্রমন ও বাংলাদেশের সৌন্দর্য - Travel & Beauty of Bangladesh, শাকীর এহসানুল্লাহ
========================================================================
মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।
Post a Comment