পর্ব-১২ঃ সিমলা থেকে মানালি-১



অল্প খরচে ট্যুর প্ল্যান জানতে সবসময় Tour on Budget এর সাথে থাকুন।
২৩শে সেপ্টেম্বর’১৫


বেশ ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। সকালে সিমলা থেকে মানালি যাবার শেষ বাস সাড়ে নটায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে আমি রেডি। কিন্তু সেতু আর নিয়নের যেন কোন তাড়া নেই। তারা দুজনে বিছানায় ছাড়তে চাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত নটার সময় তারা রহস্য খোলসা করলো। তারা আমাকে জানালো যে তারা মানালি যাবে না। এমনকি আমাকেও যেতে দেবে না। আমাকে নিয়ে আজ বিকালে তারা জম্মুর উদ্দেশ্যে রওনা দেবে। সেখান থেকে কাশ্মীরের শ্রীনগরে তাদের পরিচিত এক ডাক্তার আঙ্কেলের বাসায় উঠবে। সেখানে সবাই একসাথে কুরবানি ঈদের নামাজ আদায় করা হবে। 

তাদের পরিকল্পনা শুনেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গেল। বুঝলাম যে এদের সাথে আর কিছুক্ষন থাকলে আমার পুরো ট্যুরটাই একেবারে মাটি হয়ে যাবে। সঙ্গে সঙ্গে আমার ব্যাগপত্র উঠিয়ে রওনা দিলাম। পরে আমি টের পেয়েছিলাম জীবনে যে কয়টা বড় বড় ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছি তার মধ্যে সবচেয়ে বড় সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল এটি।


আমার পিছু পিছু নিয়নও আসলো। সে আমার সাথে নিউ বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত যাবে। তার দ্বিতীয় উদ্দেশ্য হচ্ছে সিমলা থেকে জম্মু যাবার বাসের টিকিট কাটা। আর প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে আমার মানালি যাওয়া ঠেকিয়ে তাদের সাথে জম্মু যাবার ব্যাপারে রাজি করা। 

হোটেল থেকে বের হয়ে নিচের দিকে নামতে লাগলাম লোকাল বাস ধরার উদ্দেশ্যে। ওল্ড বাসস্ট্যান্ডের দিকে না গিয়ে শর্টকাট রাস্তা ধরলাম। কিছুদূর হাটার পর তিন রাস্তার মোড়ে এসে আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দরী মহিলা ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে দেখে দৌড় দিলাম তার দিকে। জানতে চাইলাম নিউ বাসস্ট্যান্ড যাবার বাস কোনটা। স্যার সম্বোধন করে মিষ্টি হেসে সে সবকিছু বুঝিয়ে দিল। আহ জীবনটা ধন্য হয়ে গেল! 



বাসস্টপে দাঁড়িয়ে আছি তো দাড়িয়েই আছি। আমাদের যে বাসটা দরকার শুধুমাত্র সে বাসটারই দেখা নেই। শেষ পর্যন্ত বাধ্য হয়ে ওল্ড বাসস্ট্যান্ডের দিকে হাঁটা শুরু করলাম ঝুলন্ত ফুটপাত দিয়ে। কিছুক্ষণ পর রেল স্টেশন পার হলাম। 


আর এখানেই দেখা হলো আমাদের হোটেলের মালিকের সাথে। দূর থেকে আমাদের দেখে এগিয়ে এসে সে হাসিমুখে আমাদের সাথে গল্প শুরু করলো। আমি তখনও হতভম্ব। কাল রাতে ঐ ঘটনার পর সে আমাদের সাথে এভাবে গল্প করছে! সত্যিই সেতু যে কি জিনিস তা আল্লাহই জানে!

রেল স্টেশন পার হয়ে এসে ওল্ড বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে উঠলাম। দুজনের ভাড়া ১৪রুপি হলেও কন্ট্রাকটার ব্যাটা খুচরা না থাকার অজুহাতে ১৫রুপি নিলো।নিউ বাসস্ট্যান্ডে নেমে ইনফরমেশন ডেস্কের দিকে দৌড় দিলাম। ততোক্ষণে সাড়ে দশটা বেজে গেছে। ডেস্ক থেকে জানালো মানালি যাবার সব বাস চলে গেছে। পরের বাস বিকাল তিনটার পর থেকে। তথ্যটা শুনে নিয়ন খুব খুশি হয়ে উঠলো। সে আমাকে আবার তাদের সাথে জম্মু যাবার জন্য প্ররোচিত করতে লাগলো। 

কিন্তু আমি হাল ছাড়লাম না। বাসস্ট্যান্ডের বিভিন্ন লোকের কাছে শুনে শুনে যা জানলাম তা হচ্ছে সিমলা থেকে মান্ডি পর্যন্ত লোকাল বাস যায়। আর মান্ডি থেকে মানালি পর্যন্ত সহজেই বাস মিলবে। মান্ডি যাবার বাসের কন্ট্রাকটার আমাকে খুঁজে খুঁজে বের করে হাতে ২১৫ রুপির একটা স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে বাসে উঠিয়ে দিলো। সে আমাকে জানালো যে সে আমাকে মান্ডি থেকে মানালি যাবার বাসে উঠিয়ে দেবে। 

নিয়নের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাসে উঠে বসলাম। খুবই খারাপ লাগছে। নিয়নের অবস্থাও একইরকম। আসলে তিনদিনেই আমরা খুব আপন হয়ে উঠেছিলাম। এখন ছেড়ে যেতে খুবই কষ্ট লাগছে। মনে হচ্ছে কি হতো ওদের সাথে জম্মু গেলে! 

আমিই সর্বশেষ ব্যাক্তি হিসেবে বাসে উঠলাম। আমার ওঠার সাথে সাথে বাস ছেড়ে দিলো। কোন দুরপাল্লার লোকাল বাস যে এতো সুন্দর হতে পারে তা আমি এই প্রথম দেখলাম। সামনের দিকে দরজার পাশে একটা সিট পেয়েছি। পাশের সহযাত্রীর সাথে গল্প শুরু করে দিলাম। কন্ট্রাকটার এলে তাকে ২১৫ রুপির স্লিপ না দেখিয়ে ৫০০রুপির নোট দিলাম। সে আমাকে ৩০০রুপি ফেরত দিলো। আচ্ছা তাহলে এই ব্যাপার! ব্যাটা আমাকে বোকা পেয়ে ১৫রুপি হাতিয়ে নেবার তালে ছিলো! স্লিপ দেখালেই আমি ১৫রুপির ধরা খেয়ে যেতাম।


সিমলা থেকে মান্ডির দূরত্ব ১৪০ কিঃমিঃ। পেচিয়ে পেচিয়ে রাস্তা শুধু নামছে আর নামছে। আসলে সিমলা শহরটা যে এতো উঁচু তা আগে বুঝতে পারিনি। আসার সময় কালকা থেকে টয় ট্রেনে এসেছি বলে বুঝতে পারিনি। এখানকার বাসগুলো দেখি খুবই আইন মানে। কন্ট্রাকটার বাঁশি বাজালে ড্রাইভার বাস চালায় অথবা বাস থামায়। এখানে বাস থাবড়ানোর কোন ব্যাপারই নেই। তাছাড়া প্রত্যেক যাত্রী ওঠা বা নামার পর নিজ দায়িত্বে বাসের দরজা বন্ধ করে। বাসের মধ্যে কোন প্রকার হইচই গোলমাল বা গালাগাল নেই। 
কিন্তু আমার সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। সিমলা থেকে মানালি যাবার পথ এতো ঘুরিয়ে পেচিয়ে নেমেছে যে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেল। মাথা যন্ত্রণা করে ভয়ানক বমি পেতে লাগলো। বাস পাহাড়ের পাকদন্ডি বেয়ে নেমে চলেছে আর আমার পেটের পাকদন্ডি বেয়ে কি যেন গলার কাছে ঠেলে উঠছে। আমি খুব কষ্ট করে চেপে বসে আছি। 

এসময় দেখলাম দাঁড়িয়ে থাকা এক বুড়ি উল্টি আরাহিহে বলে আমাকে কি যেন বোঝাচ্ছে। আমি কিছুই বুঝলাম না। শেষ পর্যন্ত বুড়ি নিজেই আমার পাশের জানালা খুলে বমি করা শুরু করলো। ও আল্লাহ, উল্টি আরাহিহে মানে হচ্ছে বমি আসছে! আর এজন্যই বুড়ি জানালা খুলতে বলছিল যেন সে বমি করতে পারে। 

এমনিতে নিজের অবস্থা সামাল দিতে গিয়ে আমি অস্থির তারপর দেখি সামনে একজন বমি করছে। কি অবস্থা! শেষ পর্যন্ত না পেরে ব্যাগ থেকে খুঁজে খুঁজে এভোমিন বের করলাম। ঔষধটা খাওয়ার কিছুক্ষণ পর দেখি আমি চোখ মেলতে পারছি না। পাশের লোকটির কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। হায় আফসোস, দুপাশে এতো সুন্দর জায়গা, আমি কোন ছবি তোলা তো দূরে থাকুক চোখ মেলে একটু দেখতেও পারছি না।







========================================================================


মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।


বেশ ভোরে ঘুম থেকে উঠলাম। সকালে সিমলা থেকে মানালি যাবার শেষ বাস সাড়ে নটায়। ব্যাগপত্র গুছিয়ে আমি রেডি। কিন্তু সেতু আর নিয়নের যেন কোন তাড়া নেই। তারা দুজনে বিছানায় ছাড়তে চাচ্ছে না। শেষ পর্যন্ত নটার সময় তারা রহস্য খোলসা করলো। তারা আমাকে জানালো যে তারা মানালি যাবে না। এমনকি আমাকেও যেতে দেবে না।

Post a Comment

[blogger]

Author Name

{picture#https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1196479430442738} YOUR_PROFILE_DESCRIPTION {facebook#https://www.facebook.com/alwasikbillah} {twitter#https://twitter.com/awasikb} {google#https://plus.google.com/112469283873821392454} {instagram#https://www.instagram.com/awasikb}

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.