সুন্দরবন |
প্রায় ছয় হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার আয়তনের বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ ফরেস্ট এই সুন্দরবন ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে ছয়বার তার রূপ বদলায়। সুন্দরবনের করমজল বন্য ও কুমির প্রজনন কেন্দ্র, হারবাড়িয়া ইকো সেন্টার, কটকা, কচিখালী ও নীলকমল অভয়ারণ্য, শেখেরহাট টেম্পল, কলাগাছিয়া ইকো ট্যুরিজম সেন্টার, মান্দারবাড়িয়া অভয়ারণ্য নামের স্পটগুলো পর্যটকদের জন্য নির্ধারিত। এসব স্পটে কুমির প্রজনন, অসুস্থ হরিণের পরিচর্যা, হাজার বছরের পুরনো স্থাপনার ধ্বংসাবশেষসহ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যর্ উপভোগ করা যায়। ভাগ্য সহায় হলে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ, কাঁকড়া অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানো দৃশ্যও দেখতে পারেন।
অল্প সময়ে কম খরচে সুন্দরবন ভ্রমণের স্বাদ নিতে হলে করমজলই শ্রেষ্ঠ। মংলা বন্দর থেকে নৌপথে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই ইঞ্জিনচালিত ছোট ছোট নৌকায় চড়ে এখানে যাওয়া যায়। এখানে কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ছোট বড় অসংখ্য কুমির দেখতে পাবেন। সুন্দরবনের আরেকটি অভয়ারণ্য হিরণ পয়েন্ট। এটি পুরো সুন্দরবন এলাকার বনেদি অঞ্চলগুলোর মধ্যে অন্যতম। চারদিকে নদীঘেরা। সেখানে হরিণের দল পানি খেতে আসে।
ভাগ্য সহায় হলে বাঘের পানি পানের দৃশ্যও দেখা যেতে পারে। খুলনা শহরে বর্তমানে বিদেশি মানের হোটেলসহ মানসম্মত অনেকগুলো হোটেল আছে। এর মধ্যে অন্যতম অভিজাত হোটেল সিটি ইন, হোটেল ক্যাসল সালাম, হোটেল রয়্যাল ইন্টারন্যাশনাল, টাইগার গার্ডেন। এসব হোটেলের ভাড়া একটু বেশি।
বাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে, যা সেখানে প্রচুর জন্মায়। অন্যান্য সম্ভাব্য ব্যাখ্যা এরকম হতে পারে যে, এর নামকরণ হয়তো হয়েছে “সমুদ্র বন” বা “চন্দ্র-বান্ধে (বাঁধে)” (প্রাচীন আদিবাসী) থেকে। তবে সাধারণভাবে ধরে নেয়া হয় যে সুন্দরী গাছ থেকেই সুন্দরবনের নামকরণ হয়েছে।
সুন্দরবন বঙ্গোপসাগর উপকূলবর্তী প্রশস্ত বনভূমি যা বিশ্বের প্রাকৃতিক বিস্ময়াবলীর অন্যতম। পদ্মা, মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র নদীত্রয়ের অববাহিকায় বদ্বীপ এলাকায় অবস্থিত এই অপরূপ বনভূমি বাংলাদেশের খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, পটুয়াখালি ও বরগুনা জেলা জুড়ে বিস্তৃত। সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। ১০,০০০ বর্গ কিলোমিটার জুড়ে গড়ে ওঠা সুন্দরবনের ৬,০১৭ বর্গ কিলোমিটার রয়েছে বাংলাদেশে।
সুন্দরবন ১৯৯৭ খ্রিস্টাব্দে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। এর বাংলাদেশ ও ভারতীয় অংশ বন্তুত একই নিরবচ্ছিন্ন ভূমিখণ্ডের সন্নিহিত অংশ হলেও ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় ভিন্ন ভিন্ন নামে সূচিবদ্ধ হয়েছে যথাক্রমে সুন্দরবন ও সুন্দরবন জাতীয় উদ্যান নামে। সুন্দরবনকে জালের মত জড়িয়ে রয়েছে সামুদ্রিক স্রোতধারা, কাদা চর এবং ম্যানগ্রোভ বনভূমির লবণাক্ততাসহ ক্ষুদ্রায়তন দ্বীপমালা। মোট বনভূমির ৩১.১ শতাংশ, অর্থাৎ ১,৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা, খাঁড়ি, বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল।
বনভূমিটি, স্বনামে বিখ্যাত রয়েল বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও নানান ধরণের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে পরিচিত। জরিপ মোতাবেক ৫০০ বাঘ ও ৩০,০০০ চিত্রা হরিণ রয়েছে এখন সুন্দরবন এলাকায়। ১৯৯২ সালের ২১শে মে সুন্দরবন রামসার স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
বাংলাদেশ অংশের সুন্দরবনের আয়তন প্রায় ৪,১১০ বর্গ কি.মি.। এর মধ্যে নদী, খাল ও খাঁড়ি রয়েছে প্রায় ১,৭০০ বর্গ কি.মি. যাদের প্রশস্ততা কয়েক মিটার থেকে শুরু করে কয়েক কি.মি. পর্যন্ত। জালের মত পরস্পর যুক্ত নৌপথের কারণে সুন্দরবনের প্রায় সব জায়গাতেই সহজে নৌকায় করে যাওয়া যায়। সুন্দরবনের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে ২টি বনবিভাগ, ৪টি প্রশাসনিক রেঞ্জ – চাঁদপাই, শরণখোলা, খুলনা ও বুড়িগোয়ালিনি এবং ১৬টি বন স্টেশন। বনটি আবার ৫৫ কম্পার্টমেন্ট এবং ৯টি ব্লকে বিভক্ত।
১৯৯৩ সালে নতুন করে খুলনা বন সার্কেল গঠন করা হয়েছে বন সংরক্ষণের জন্য এবং তাতে একটি সংরক্ষক পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। বনবিভাগের প্রশাসনিক প্রধাণের পদটি খুলনাকেন্দ্রিক। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য বিভাগীয় বন কর্মকর্তার অধীনে রয়েছে বহুসংখ্যক পেশাদার, অপেশাদার ও সহায়ক জনবল। ব্যবস্থাপনার কেন্দ্রীয় একক হল কম্পার্টমেন্ট। চারটি বন রেঞ্জের অধীনে থাকা ৫৫টি কম্পার্টমেন্ট স্পস্টতই নদী, খাল, খাঁড়ির মত প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট অনুযায়ী বিভক্ত।
বাংলাদেশে অভয়ারণ্য তিনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন, ১৯৭৩ (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। এগুলো হলোঃ
- পূর্বাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্য: আয়তন প্রায় ৩১,২২৭ হেক্টর। মিঠাপানি ও সুন্দরী গাছের (Heritiera fomes) প্রাধাণ্যের সাথে সাথে গেওয়া (Excoecaria agallocha), প ও কেওড়া (Bruguiera gymnorrhiza) রয়েছে বন্যাপ্রবণ এলাকাটি জুড়ে। সিংড়া (Cynometra ramiflora) হয় অপেক্ষাকৃত শুষ্ক মাটিতে, আমুর (Amoora cucullata) হয় জলপ্রধাণ এলাকায়, গরান (Ceriops decandra) হয় নোনা এলাকায় এবং গোল পাতা (Nypa fruticans) জলধারা বরাবর হয়।
- দক্ষিণাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্য: বিস্তৃত ৩৬,৯৭০ হেক্টর এলাকা জুড়ে। এলাকাটিতে লবণাক্ততার বিশাল মৌসুমী তারতম্যের প্রমাণ রয়েছে। তুলনামূলকভাবে দীর্ঘকালীন লবণাক্ততাপ্রবণ এলাকাটির প্রধান বৃক্ষ প্রজাতির মধ্যে রয়েছে গেওয়া। এটি প্রায়ই সেসব স্থানে জন্মায় যেখানে সুন্দরী অত সফলভাবে বংশ বিস্তার করতে পারে না।
- পশ্চিমাঞ্চলীয় সুন্দরবন অভয়ারণ্য: ৭১,৫০২ হেক্টর এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এ এলাকার তুলনামূলকভাবে শুষ্ক ভূমি ও নদীর তীরে গেওয়া, গরান ও হন্তাল জন্মে।
এক নজরে সুন্দরবনঃ
নামকরণবাংলায় সুন্দরবন-এর আক্ষরিক অর্থ সুন্দর জঙ্গল বা সুন্দর বনভূমি। সুন্দরী গাছ থেকে সুন্দরবনের নামকরণ হয়ে থাকতে পারে যা সেখানে প্রচুর জন্মায়।নিকটবর্তী শহর খুলনা সাতক্ষীরা বাগেরহাট। আয়তন ১৩৯৫০০ হেক্টর (৩৪৫০০০ একর)।
যা আপনায় আকর্ষন করবেঃ
- প্রাণীবৈচিত্র্য: সুন্দরবনের বাস্তুসংস্থান মৌলিক প্রকৃতির এবং যা বন্য প্রাণীর বিশাল আবসস্থল। বন্য প্রাণীর সংখ্যা এবং এর লালনক্ষেত্রের উপর মানুষের সম্পদ সংগ্রহ ও বন ব্যবস্থাপনার প্রভাব অনেক। কচ্ছপ (কেটো কচ্ছপ – Betagur baska, সুন্দি কাছিম – Lissemys punctata এবং ধুম তরুণাস্থি কাছিম – Trionyx hurum), গিরগিটি Yellow monitor – Varanus flavescens ও Water monitor – Varanus salvator), অজগর (Python molurus) এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগার (Panthera tigris tigris) সুন্দরবনের স্থানীয় প্রজাতিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এদের মধ্যে কিছু প্রজাতি সংরক্ষিত, বিশেষ করে বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ) (সংশোধিত) আইন, ১৯৭৪ (P.O. 23 of 1973) দ্বারা। বিভিন্ন প্রজাতির হরিণ (Hog deer – Axis procinus ও Swamp deer – Cervus duvauceli), মহিষ (Bubalis bubalis), জাভাদেশীয় গণ্ডার – Rhiniceros sondaicus ও ভারতীয় গণ্ডার – Rhinoceros unicornis) এবং স্বাদুপানির কুমিরের (Crocodylus palustris) মত কিছু কিছু প্রজাতি সুন্দরবনে বিরল হয়ে উঠেছে ২১ শতকের শুরু থেকে। বাংলাদেশের সুন্দরবন বাণিজ্যিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রাজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাজাতির আবাসস্থল। এ থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সুন্দরবনে বিভিন্ন প্রজাতির একটি বড় অংশ বিদ্যমান (যেমনঃ ৩০ শতাংশ সরীসৃপ, ৩৭ শতাংশ পাখি ও ৩৭ শতাংশ স্তন্যপায়ী) এবং এদের একটি বড় অংশ দেশের অন্যান্য অংশে বিরল Of these wildlife, Sarker has noted that two amphibians, 14 reptiles, 25 aves and five mammals are presently endangered.। সরকারের মতে এই প্রানীবৈচিত্র্যের মধ্যে ২ প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি এবং ৫ প্রজাতির স্তনপায়ী বর্তমানে হুমকির মুখে। পাখি বিষয়ক পর্যবেক্ষণ, পাঠ ও গবেষণার ক্ষেত্রে পাখিবিজ্ঞানীদের জন্য সুন্দরবন এক স্বর্গ। ইতোমধ্যে বহুপ্রাণী বিলুপ্ত হয়েছে যার মধ্যে আছে বুনো মহিষ, পারা হরিণ, বুনো ষাঁড়, ছোট ও বড় এক শৃঙ্গি গণ্ডার, বার শিংগা, চিতা বাঘ। আরো লুপ্ত হয়েছে সাদা মানিক জোড়া কান ঠুনি, বোঁচা হাঁস, গগন বেড়, জলার তিতিরসহ বিভিন্ন পাখি।
- মানুষখেকো বাঘ: সুন্দরবন প্রায় ৫০০ রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাঘের আবাসস্থল যা বাঘের একক বৃহত্তম অংশ। এসব বাঘ উল্ল্যেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ, গড়ে প্রতি বছরে প্রায় ১০০ থেকে ২৫০ জন, মেরে ফেলার কারণে ব্যপকভাবে পরিচিত। মানুষের বাসস্থানের সীমানার কাছাকাছি থাকা একমাত্র বাঘ নয় এরা। বাঘের অভায়ারণ্যে চারপাশ ঘেরা বান্ধবগড়ে, মানুষের উপর এমন আক্রমণ বিরল। নিরাপত্তার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা নেয়ায় ভারতীয় অংশের সুন্দরবনে বাঘের আক্রমণে একটিও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে বাংলাদেশের সুন্দরবনে ১৯৮১ খ্রিস্টাব্দ থেকে ২০০৪ পর্যন্ত কালপরিধিতে অর্ধাশতাধিকের বেশী বাঘ মানুষের হাতে মারা গেছে।
- মৎস্য সম্পদ: সুন্দরবনের সামগ্রিক মাছের ওপর পূর্বাপর কোনো বৈজ্ঞানিক গবেষণা হয়নি। ফলে মাছের বর্তমান অবস্থা, বিলুপ্ত মাছ, বিলুপ্তপ্রায় মাছের ওপর উপাত্তনির্ভর তথ্য পাওয়া যায় না। শুধু, মানুষ যেসব মাছ খায় এবং যেসব মাছ রপ্তানি উপযোগী, সেসব মাছ চিহ্নিত করা হয়েছে। ধারণা করা হয়, সুন্দরবনে শিরদাঁড়াওয়ালা মাছ রয়েছে প্রায় ৩০০ প্রজাতির। সাইডেনস্টিকার ও হাই-এর (পরিপ্রেক্ষিত ১৯৭৮) মতে, এর মধ্যে বাণিজ্যিক মাছ ১২০ প্রজাতির; অবশ্য বার্নাকসেকের মতে, (২০০০) বাণিজ্যিক মাছ ৮৪ প্রজাতির, কাঁকড়া-চিংড়ি ১২ প্রজাতির ও ৯ প্রজাতির শামুক রয়েছে। সুন্দরবনে মৎস্যসম্পদকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। সব মাছ মিলিয়ে হয় সাদা মাছ, বাকিরা বাগদা, গলদা, কাঁকড়া। আশির দশকে চিংড়ির পোনা ধরা শুরু হওয়ার পর মাছের প্রাচুর্য হঠাৎ কমে যায়। একসময় স্থানীয় জনসাধারণের প্রাণিজ প্রোটিন ৮০ শতাংশ মেটাতো মাছ। এখন মাছ খাওয়ার সৌভাগ্য এলাকার খুব কম লোকের ভাগ্যে জোটে। সুন্দরবনে কালা হাঙর, ইলশা কামট, ঠুঁটি কামট, কানুয়া কামট পাওয়া যায়। আগে এদের খালিশপুর এলাকা পর্যন্ত পাওয়া যেতো, এখন (২০১০) অনেক দক্ষিণে সরে গেছে। পশ্চিম সুন্দরবনে এদের উৎপাত বেশি। এরা সংখ্যায় অনেক কমে গেছে, বিশেষ করে কালা হাঙর প্রায় দেখাই যায় না। ৯ প্রজাতির শাঁকজ বা শাপলাপাতা মাছের অধিকাংশই এখন (২০১০) সুন্দরবনের খাঁড়ি এলাকায় দেখা যায় না। কুঁচে কা কামিলা-জাতীয় মাছের পাঁচটি প্রজাতির সাগর কুইচ্চা ও ধানি কুইচ্চার অবস্থা খুবই খারাপ। আগের দিনে বাম মাছের মতো দেখতে এই মাছগুলো স্থানীয় লোকজন খেত না। এখনো খায় না। তবে হাজার হাজার কাঁকড়া মারা জেলে কুইচ্চা মাছের টুকরো কাঁকড়া ধরার টোপ হিসেবে ব্যবহার করে। শীতকালে সাগরপারের জঙ্গলি খালে পূর্ণ জোয়ারের প্রায় স্বচ্ছ জলে আর্চার ফিশ বা তীরন্দাজ মাছ দেখা যেতো। তিতপুঁটি মাছ আকারের এই মাছগুলো জলের এক-দেড় ফুট ওপরে গাছের পাতা বা ডালে পিঁপড়ে কিংবা মধ্যম আকৃতির বিভিন্ন পতঙ্গ দেখে পিচকারীর মতো তীব্র জল ছিটিয়ে পোকাটিকে ভিজিয়ে জলে ফেলে খেয়ে নেয়। এই মাছ পূর্ণবয়সকালে ফুটখানেক লম্বা হয়। এই মাছগুলো আজকাল আর দেখি না। একসময় জাভা মাছের খুব নাম শোনা যেতো, এরা ৫৫ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। এখন (২০১০) দেখা পাওয়া ভার। পায়রাতলী বা চিত্রার মতো অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ আজকাল জেলেদের জালে খুব কম পড়ছে। সুন্দরবনের সবচেয়ে পরিচিত মাছ পারশে মাছ। ১৬ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লম্বা এ মাছটি জঙ্গলের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেতো। এখনো পাওয়া যায় খুব কম। পারশেরই জাতভাই বাটা ভাঙান। ভাঙান, গুল বাটা, খরুল ভাঙান আজকাল খুব কম ধরা পড়ে। খরশুলা বা খল্লা অত্যন্ত সুস্বাদু মাছ; বনের নদী-খালে এদের তেমন আর দেখতে পাওয়া যায় না।
কি কি দেখবেনঃ
- হীরণ পয়েন্ট: হীরনপয়েন্টে গিয়ে কাঠের তৈরি ওয়াকওয়ে ধরে বনের মাঝে হাঁটতে হাঁটতে বানর, হরিণ, গুইসাপ অথবা কুমিরের ঘুরে বেড়ানোর দৃশ্য দেখা যাবে। হীরণপয়েন্ট ছাড়াও টাইগার পয়েন্ট, বুড়িগোয়ালিনী, হারবাড়িয়া প্রভৃতি এলাকায় ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের দেখাও মিলে যেতে পারে।
- কাটকা বিচ: কাটকাতে ৪০ ফুট উচ্চ একটি টাওয়ার আছে যেখান থেকে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। একটি সুন্দর সমুদ্র সৈকত আছে এখানে। পর্যবেক্ষণ টাওয়ার হতে ফেরার সময় হেঁটে বীচের সৌন্দর্য্য উপভোগ করা যায়। কাটকা থেকে কাচিখালী (বাঘের জায়গা) পর্যন্ত প্রচুর ঘাস জন্মে বলে অনেক জীবজন্তুর আনাগোনা রয়েছে। এখানে প্রচুর জীবজন্তও দেখা যায়।
- জামতলা সৈকত: জামতলায় রয়েছে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। যেখান থেকে বিস্তীর্ণ ছনক্ষেতে হাজার হাজার হরিণের ছোটাছুটি আবার কখনও রয়েল বেঙ্গল টাইগার দেখা যেতে পারে। কচিখালী আর কটকার ঠিক মধ্যবর্তী স্থানের নাম বাদামতলা। বাদামতলা অত্যন্ত নির্জন এক সমুদ্র সৈকত। এই সৈকতটি জামতলা সৈকত নামেও পরিচিত। সিডরের আঘাতের চিহ্ন এই সবুজে ঘেরা অপরুপ সৌন্দর্যের সৈকতটিতে এখনো দেখা যায়। মংলা থেকে ১০০ কিলোমিটার দূরে কচিখালী। সমুদ্র সৈকতের প্রধান আকর্ষণ। কটকার জামতলা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার থেকে কচিখালী সমুদ্র সৈকত হয়ে বন বিভাগের কচিখালী স্টেশন পর্যন্ত হাঁটা পথ। এ পথের পাশে ঘন অরণ্যে বাঘ, হরিণ, শূকর, বিষধর সাপ ইত্যাদির এক ছমছম পরিবেশ যা দুঃসাহসী পর্যটকদের জন্য মনোমুগ্ধকর। এ সৈকতে প্রায়ই বাঘের অনাগোনা দেখা যায়।
- মান্দারবাড়িয়া সৈকত: মান্দারবাড়িয়ার একদিকে সুন্দরবন অপরদিকে বঙ্গোপসাগরের মায়াবী জলরাশির অবিশ্রান্ত গর্জন যে কোন মানুষকেই দেবে অনির্বচনীয় আনন্দ। মান্দারবাড়িয়া সমুদ্র সৈকত প্রকৃতির অপরূপা সুন্দরবন ও উত্তাল বঙ্গোপসাগরের এক রূপসী কন্যা-যা এখনও কিছুটা অনাবিস্কৃত এবং অস্পর্শিত। এখানে দাঁড়িয়ে দেখা যাবে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর থেকে মান্দারবাড়িয়া ৭৫/৮০ কিলোমিটার দুরে। সাতক্ষীরা থেকে বুড়িগোয়ালিনীর দুরত্ব ৭৫ কিলোমিটার। বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুর পর্যন্ত গাড়ীতে যাওয়া যায়, তার পরের ৭৫/৮০ কিলোমিটার যেতে হবে ইঞ্জিন চালিত নৌকা বা স্পীড বোটে। এই ৭৫/৮০ কিলোমিটার পথের পুরাটাই সুন্দরবনের বুক চিরে যাওয়া বিভিন্ন নদী।
- দুবলার চর: দুবলার চর সুন্দরবনের অন্তর্গত একটি ছোট্ট চর। এই চরের মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে ছোট ছোট নদী; সেসব নদী মিশেছে বঙ্গোপসাগরে। দুবলার চর একটু ভেতরে অবস্থিত বিধায় কোনো দশনার্থী সহজে এই চরে প্রবেশ করতে পারে না।
ঢাকা থেকে যাওয়ার ব্যবস্থাঃ
ঢাকা থেকে বাস, ট্রেন এবং লঞ্চে সরাসরি খুলনা যাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। এসি এবং ননএসি দুধরনের বাসই চলাচল করে। ঢাকা থেকে সোহাগ পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ এবং ঈগল পরিবহন নিয়মিত চলাচল করে খুলনার উদ্দেশ্য। ভোর ৬ টা থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত গাড়ীগুলো খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ঢাকা থেকে সড়ক পথে খুলনা পৌছাতে সময় লাগে ৭ ঘন্টা ৪৫ মিনিট।
ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বিভিন্ন কোম্পানীর লঞ্চ নিয়মিত যাতায়াত করছে খুলনার উদ্দেশ্যে।
সুন্দরবন যেতে হলে খুলনা বা মংলা এর যে কোন একটি যায়গা থেকে আপনাকে উঠতে হবে লঞ্চে। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন অপারেটরের বিভিন্ন মাপ ও মানের লঞ্চ।
খুলনা থেকে সাধারনত ৩০ থেকে ৭০ বেডের লঞ্চ পাওয়া যায়। আপনার টিমের আকার যদি ছোট হয় (দুই চার জন) সেগুলোতে অন্যদের সাথে কম্বাইন্ড করে সুন্দরবন ঘুরে আসতে পারেন। সাধারনত প্রতি শুক্র-রবি অথবা সোম/মঙ্গল-বুধ/বৃহঃ খুলনা লঞ্চঘাট থেকে অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। এছাড়া প্রতিদিনই প্যাকেজ থাকার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু নিশ্চিত নয়। আর নিজেদের লোক সংখ্যা যদি একটি লঞ্চের সমান হয় তাহলে প্যাকেজের ভিতরেই নিজেরাই একটি লঞ্চ নিতে পারবেন।#মংলা থেকেও এই প্যাকেজগুলো করা হয়, কিন্তু এক দুই জনের জন্য নিয়মিত কোন প্যাকেজ নেই। অনেকে সময় বাঁচানোর জন্য খুলনার লঞ্চ গুলোই মোংলায় এনে সেখান থেকে প্যাকেজ করে থাকে।মোংলা থেকে নতুন একটি সার্ভিস চালু হয়েছে। ১০ থেকে ২০ জনের গ্রুপ হলেও প্যাকেজে নিজেরা একটি লঞ্চ নিতে পারবেন। এতে আপনাদের প্রাইভেসিও থাকবে, লোক কম হওয়ায় সার্ভিসও ভালো পাবার সম্ভাবনা থাকে। আর মংলা থেকে লঞ্চে সময়ও ৩ ঘন্টা কম লাগে।
খরচ:
সুন্দরবনের প্যাকেজগুলোতে জাহাজে ওঠার পর থেকে তিনদিনের টুর শেষে আবার ঘাটে ফেরা পর্যন্ত লঞ্চভাড়া, ফুয়েল, খাবার, নাস্তা, প্রত্যেকের সরকারী পাশ, রেভিনিউ, গাইড, গানম্যান, বনে ঘুরার ছোট নৌকা সহ অন্যান্য সব খরচ ইনক্লুড থাকে। অবশ্য পকেটে হিউজ পাত্তি নিয়া গেলেও সেখানে খরচ করার কোন যায়গা নাই! অনেকে ঢাকা থেকেও প্যাকেজ করে। এখানে খুলনা বা মংলা থেকে লম্ভাব্য খরচ উল্লেখ করা হল।
#খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি টুরে সাধারনত খরচ পরে ৬০০০-৮০০০ টাকা।#বেশি ভালো যেতে চাইলে এর উপরে পারহেড ১৯,০০০ টাকা পর্যন্তও প্যাকেজ আছে।#আর সুন্দরবন টুরের খরচ কমানোর যে চেস্টা করছিলাম। সেই মোতাবেক স্টুডেন্টদের জন্য সুখবর হল এই যে ৩৫ থেকে ৪০ জন হলে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমন সম্ভব।
তবে ন্যাশনাল হলিডে গুলোতে খরচের কোন লিমিট নেই। আর পরাপর দুইদিন যদি ছুটি পরে তাহলেতো কোন কথাই নেই। খরচ আকাশও ছুতে পারে। আর এডভান্স দিয়ে এক দেড় মাস আগে বুকিং না দিলে ভ্যাসেল পাওযাই কঠিন।
অনেকে জাহাজ ভাড়া নিয়ে নিজেরাই আয়োজন করতে চায়, হ্যা সুন্দরবনে নিজেরাও আয়োজন করা সম্ভব, কিন্তু প্যারা মহদয় আপনাকে এতটাই অতিষ্ঠ করিতে পারে যে, আপনার টুরের আনন্দ মাটি না হয়ে কাঁদায় পরিনত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি!
ঢাকা থেকে খুলনা বা মংলায় যাতায়াত:
#খুলনা কিভাবে যাবেন:ঢাকার গাবতলী/কল্যানপুর/আব্দুল্লাহপুর থেকে আরিচা ফেরি হয়ে খুলনার নিয়মিত বাস আছে। নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ আর এসি ১৩০০।বাস থেকে নেমে রিক্সা বা অটোতে করে যেতে হবে লঞ্চ ঘাট।আর ট্রেনে করে খুলনা গেলে স্টেশনে নেমে আর কোন গাড়ী নিতে হবে না। কারন স্টেশন ও লঞ্চঘাট একেবারেই গায়ে লাগানো।#মংলা যাওয়ার পদ্ধতি:সায়েদাবাদ থেকে মংলার সরাসরি বাস আছে। এই সেমি চেয়ারকোচ বাসগুলো রাত ৮টা থেকে ৮.৩০ এর মধ্যে ছেড়ে গিয়ে ৫-৬টার মধ্যে মংলা পৌছায়। আর ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪৫০।এ ছাড়াও গাজীপুর থেকে মংলা যায় গ্রামীন পরিবহনের একটি গাড়ী।
কিছু পরামর্শ:সুন্দরবন টুরের দুটি উপভোগের বিষয় আছে, প্রথমটি ন্যাচার আর দ্বিতীয়টি ফুড। তাই অপারেটরের সাথে রেট ঠিক করার আগে খুব ক্লিয়ারলী কথা বলুন, সে কি দেখাবে, আর কি খাওয়াবে। কথা পাকা হয়ে গেলে সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করে অবশ্যই লিখিত চুক্তি করুন। এক ভ্যাসেলের কথা বলে আরেক ভ্যাসেল দিয়ে দেয়ার অভিযোগ নিয়মিত। তাই চুক্তিতে জাহাজের ছবি সংযোজিত থাকলে আরো ভালো। জাহাজের কাগজ ঠিক আছে কিনা পারলে সেটাও নিশ্চিত হয়ে নিন। গত পরশু এ বিষয়ের একটি পোস্ট খুবই মারাত্নক ছিলো।এ ছাড়াও আরো কোন তথ্যের দরকার হলে ইনবক্স করতে পারেন। ফ্রি সময়ে এ্যানসার দেয়ার চেস্টা করবো। আর খুলনা বা মোংলায় যে কোন ধরনের সমস্যার জন্য যোগাযোগ কইরেন, স্থানীয় হিসেবে যতটুকু পারি সহযোগীতা করবো ইনসাল্লাহ।
খুলনা থেকে সাধারনত ৩০ থেকে ৭০ বেডের লঞ্চ পাওয়া যায়। আপনার টিমের আকার যদি ছোট হয় (দুই চার জন) সেগুলোতে অন্যদের সাথে কম্বাইন্ড করে সুন্দরবন ঘুরে আসতে পারেন। সাধারনত প্রতি শুক্র-রবি অথবা সোম/মঙ্গল-বুধ/বৃহঃ খুলনা লঞ্চঘাট থেকে অপারেটরদের প্যাকেজ থাকে। এছাড়া প্রতিদিনই প্যাকেজ থাকার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু নিশ্চিত নয়। আর নিজেদের লোক সংখ্যা যদি একটি লঞ্চের সমান হয় তাহলে প্যাকেজের ভিতরেই নিজেরাই একটি লঞ্চ নিতে পারবেন।#মংলা থেকেও এই প্যাকেজগুলো করা হয়, কিন্তু এক দুই জনের জন্য নিয়মিত কোন প্যাকেজ নেই। অনেকে সময় বাঁচানোর জন্য খুলনার লঞ্চ গুলোই মোংলায় এনে সেখান থেকে প্যাকেজ করে থাকে।মোংলা থেকে নতুন একটি সার্ভিস চালু হয়েছে। ১০ থেকে ২০ জনের গ্রুপ হলেও প্যাকেজে নিজেরা একটি লঞ্চ নিতে পারবেন। এতে আপনাদের প্রাইভেসিও থাকবে, লোক কম হওয়ায় সার্ভিসও ভালো পাবার সম্ভাবনা থাকে। আর মংলা থেকে লঞ্চে সময়ও ৩ ঘন্টা কম লাগে।
খরচ:
সুন্দরবনের প্যাকেজগুলোতে জাহাজে ওঠার পর থেকে তিনদিনের টুর শেষে আবার ঘাটে ফেরা পর্যন্ত লঞ্চভাড়া, ফুয়েল, খাবার, নাস্তা, প্রত্যেকের সরকারী পাশ, রেভিনিউ, গাইড, গানম্যান, বনে ঘুরার ছোট নৌকা সহ অন্যান্য সব খরচ ইনক্লুড থাকে। অবশ্য পকেটে হিউজ পাত্তি নিয়া গেলেও সেখানে খরচ করার কোন যায়গা নাই! অনেকে ঢাকা থেকেও প্যাকেজ করে। এখানে খুলনা বা মংলা থেকে লম্ভাব্য খরচ উল্লেখ করা হল।
#খাবারের মান ও জাহাজ ভেদে মাঝারি ধরনের একটি টুরে সাধারনত খরচ পরে ৬০০০-৮০০০ টাকা।#বেশি ভালো যেতে চাইলে এর উপরে পারহেড ১৯,০০০ টাকা পর্যন্তও প্যাকেজ আছে।#আর সুন্দরবন টুরের খরচ কমানোর যে চেস্টা করছিলাম। সেই মোতাবেক স্টুডেন্টদের জন্য সুখবর হল এই যে ৩৫ থেকে ৪০ জন হলে একটি লঞ্চে ফ্লোরিং করে ৪০০০-৫০০০ টাকার মধ্যেও তিন দিনের সুন্দরবন ভ্রমন সম্ভব।
তবে ন্যাশনাল হলিডে গুলোতে খরচের কোন লিমিট নেই। আর পরাপর দুইদিন যদি ছুটি পরে তাহলেতো কোন কথাই নেই। খরচ আকাশও ছুতে পারে। আর এডভান্স দিয়ে এক দেড় মাস আগে বুকিং না দিলে ভ্যাসেল পাওযাই কঠিন।
অনেকে জাহাজ ভাড়া নিয়ে নিজেরাই আয়োজন করতে চায়, হ্যা সুন্দরবনে নিজেরাও আয়োজন করা সম্ভব, কিন্তু প্যারা মহদয় আপনাকে এতটাই অতিষ্ঠ করিতে পারে যে, আপনার টুরের আনন্দ মাটি না হয়ে কাঁদায় পরিনত হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি!
ঢাকা থেকে খুলনা বা মংলায় যাতায়াত:
#খুলনা কিভাবে যাবেন:ঢাকার গাবতলী/কল্যানপুর/আব্দুল্লাহপুর থেকে আরিচা ফেরি হয়ে খুলনার নিয়মিত বাস আছে। নন এসি বাসের ভাড়া ৫৫০ আর এসি ১৩০০।বাস থেকে নেমে রিক্সা বা অটোতে করে যেতে হবে লঞ্চ ঘাট।আর ট্রেনে করে খুলনা গেলে স্টেশনে নেমে আর কোন গাড়ী নিতে হবে না। কারন স্টেশন ও লঞ্চঘাট একেবারেই গায়ে লাগানো।#মংলা যাওয়ার পদ্ধতি:সায়েদাবাদ থেকে মংলার সরাসরি বাস আছে। এই সেমি চেয়ারকোচ বাসগুলো রাত ৮টা থেকে ৮.৩০ এর মধ্যে ছেড়ে গিয়ে ৫-৬টার মধ্যে মংলা পৌছায়। আর ভাড়া পড়বে ৩৫০-৪৫০।এ ছাড়াও গাজীপুর থেকে মংলা যায় গ্রামীন পরিবহনের একটি গাড়ী।
কিছু পরামর্শ:সুন্দরবন টুরের দুটি উপভোগের বিষয় আছে, প্রথমটি ন্যাচার আর দ্বিতীয়টি ফুড। তাই অপারেটরের সাথে রেট ঠিক করার আগে খুব ক্লিয়ারলী কথা বলুন, সে কি দেখাবে, আর কি খাওয়াবে। কথা পাকা হয়ে গেলে সেই বিষয়গুলো উল্লেখ করে অবশ্যই লিখিত চুক্তি করুন। এক ভ্যাসেলের কথা বলে আরেক ভ্যাসেল দিয়ে দেয়ার অভিযোগ নিয়মিত। তাই চুক্তিতে জাহাজের ছবি সংযোজিত থাকলে আরো ভালো। জাহাজের কাগজ ঠিক আছে কিনা পারলে সেটাও নিশ্চিত হয়ে নিন। গত পরশু এ বিষয়ের একটি পোস্ট খুবই মারাত্নক ছিলো।এ ছাড়াও আরো কোন তথ্যের দরকার হলে ইনবক্স করতে পারেন। ফ্রি সময়ে এ্যানসার দেয়ার চেস্টা করবো। আর খুলনা বা মোংলায় যে কোন ধরনের সমস্যার জন্য যোগাযোগ কইরেন, স্থানীয় হিসেবে যতটুকু পারি সহযোগীতা করবো ইনসাল্লাহ।
কোথায় থাকবেন:
ট্যুরিস্ট ভেসেল বা নৌযান ছাড়াও সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে হিরণপয়েন্টের নীলকমল এবং টাইগার পয়েন্টের কচিখালী ও কাটকায় বন বিভাগের রেস্টহাউজে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। যার ফি নীলকমলে দেশি পর্যটকদের জন্য প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা,চার কক্ষ ১২ হাজার টাকা। কচিখালী প্রতি কক্ষ তিন হাজার টাকা, চার কক্ষ ১০ হাজার টাকা। কটকা প্রতি কক্ষ দুই হাজার টাকা, দুই কক্ষ চার হাজার টাকা। বিদেশিদের ক্ষেত্রে নীলকমলে পাঁচ হাজার ও ২০ হাজার টাকা, কচিখালীতে পাঁচ হাজার ও ১৫ হাজার টাকা এবং কাটকায় পাঁচ হাজার ও ১০ হাজার টাকা। সুন্দরবনের পাশে সাতক্ষীরা শহরে সাধারণ মানের হোটেল ও শ্যামনগরের মুন্সিগঞ্জে এনজিও সুশীলনের রেস্টহাউস ও ডরমেটরিতে একক,পরিবার ও গ্রুপ নিয়ে থাকার সুবিধা রয়েছে। মংলায় আছে পর্যটন কর্পোরেশনের হোটেল,পশুর বন্দরে সাধারণ হোটেল আছে পর্যটকদের থাকার জন্য। খুলনা মহানগরে হোটেল রয়েল,ক্যাসেল সালাম,হোটেল টাইগার গার্ডেন,হোটেল ওয়েস্ট ইন্,হোটেল সিটি ইন,হোটেল মিলিনিয়াম ইত্যাদি মানসম্পন্ন হোটেল ছাড়াও সাধারণ মানের হোটেলে সুন্দরবনে ভ্রমণকারীরা অবস্থান করে থাকেন।
========================================================================
মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।
Ever Youth Tourism Best Tour Operator in sundorbon. con. +8801914669688 or fb.com/everyouthtourism
ReplyDeleteধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য...
Deleteআমি নিজে ট্যুর এরেঞ্জ করতে চাই শুধু লঞ্চ টা ভাড়া করব এরপর খাওয়া আর সবখানের টাকা নিজে দিব সেক্ষেত্রে কিভাবে করলে ভাল হয় একটু পরামর্শ দরকার
ReplyDeleteসেক্ষেত্রে আপনি লোকাল লঞ্চ সার্ভিস এর সাথে কথা বলে আপনার প্রয়োজন আর ডিমান্ড জানান... দেখুন ওরা আপনার শর্তে রাজি হয় কিনা... ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য...
Delete