অল্প খরচে ঘুরে আসুন রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটি

রাঙ্গামাটি ভ্রমন সহায়িকা


অনেক ভ্রমন বিলাসীরা নিশ্চয় প্লান করা শুরু করে দিয়েছেন কোথায় কোথায় যাওয়া যায় এই গরমে ? তাহলে চলুন যাওয়া যাক,“লোকালয় ছেড়ে, ঔ দূর পাহাড়ে।”

“রাঙ্গামাটি” প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। এখানকার লেক, ঝরনা, নীল আকাশ, পাহাড় সর্বপরি আদিবাসি মানুষের সাধারন সহজ-সরল জীবন আপনাকে বিমহিত করবে। এখানে যেদিকে তাকাবেন নজরে পড়বে কেবল পাহাড় আর কাপ্তাই লেকের পানি। বিশাল কাপ্তাই লেকের পুরোটাই যেন অপার মমতায় দুহাত দিয়ে ধরে রেখেছে পাহাড়গুলি। আকাশের মেঘ আর তার নীলাভ আভা খেলা করে লেকের জলে, দূরে পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে যায়, আবার যেন উকি দিয়ে দেখে নেয়, কেমন আছে লেক। দৃঢ়তার সাথে বলা যায়, এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের টান আপনাকে টানবেই।

অরণ্য, পাহাড়, ঝর্না, লেক, পাহাড়ী নদী আর পাহাড়ী আদিবাসী এসব যাদের পছন্দ ভ্রমনের জন্য তারা বেছে নিতে পারেন রাঙ্গামাটি জেলাকে।

কি কি দেখবেন?
১) শুভলং ঝর্ণাঃ কেবল বর্ষাকালে শুভলং ঝর্নার পানি থাকলেও অসাধারন শুভলং চ্যানেল দেখতে সারা বছরই পর্যটকদের আগমন ঘটে এখানে। ঘুরে দেখতে পারেন শুভলং আর্মী ক্যাম্প ও শুভলং বাজার। রাঙ্গামাটির রিজার্ভ বাজার থেকে শুভলং আপ-ডাউন রিজার্ভ বোট ভাড়া প্রায় ১২০০ টাকা।খরচ কমাতে এবং ইঞ্জিন বোটের ইঞ্জিনের বিকট শব্দ থেকে রক্ষা পেতে রিজার্ভ বাজার থেকে লঞ্চে শুভলং যেতে পারেন। লঞ্চ ভাড়া জনপ্রতি ৫০ টাকা।
শুভলং ঝর্ণা

২) কাঠের সেতু সুবলংঃ সুবলং এ এখানকার পরিবেশ টা বেশ গোছানো সুন্দর। ফুলের বাগান, হাটার জন্য ব্রীজ, উচু বসার জায়গা সবই আপনার দৃষ্টি কাড়বে। এখানে গোসল সেরে নিতে ভুলবেন না। তবে বেশী ঝুঁকি নেবেন না। মনে রাখবেন পা পিছলে আলুর দম হতে সময় লাগে না। আর পড়লে হাড্ডি ভাংবেই। এখানে একটি সেনা ক্যাম্প আছে। এখান খেকে সুবলং বাজারে যাওয়া যায়। সুবলং বাজারের ফল, সবজি ও খাবার বিখ্যাত। রাস্তাটিতে মাঝে মাঝে বুনো হাতি চলাচল করে তাই সাবধানে চোখকান খোলা রেখে চলবেন।

৩) রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত সেতু এলাকায় পাহাড়ী রাস্তাঃ রাঙ্গামাটি শহরের শেষ প্রান্তে এবং কাপ্তাই লেকের ধার ঘেষে ঝুলন্ত সেতুর অবস্থান। পাশে একটি বিজিবি ক্যাম্প রয়েছে। বিজিবি ক্যাম্পএর বাগান ও নগর সৌন্দর্য করন আপনার ভাল লাগবে। পাশে রয়েছে পর্যটন মোটেল। অপূর্ব নির্মান শৈলীর কারনে সেতুটি নজর কাড়ে।

৪) ঝুলন্ত ব্রিজঃ দুই পাহাড়ের মাঝে প্রায় ঝুলন্ত এই ব্রিজটি দেখতে রাঙ্গামাটিতে অসংখ্য পর্যটকের আগমন ঘটে। ব্রিজের এক পাশের পাহাড়ের উপর রয়েছে শিশুদের জন্য দোলনা, স্লিপার সহ অন্যান্য বিনোদনের ব্যবস্থা।ব্রিজের নিচ থেকে নৌকা ভাড়া করে লেকে ভ্রমন করতে পারেন। ঝুলন্ত ব্রিজে প্রবেশ ফি জনপ্রতি ১০ টাকা।শহরের তবলছড়ি থেকে ঝুলন্ত ব্রিজে সিএনজি ভাড়া ৫০-৬০ টাকা, বনরূপা থেকে ১২০ টাকা।
ঝুলন্ত ব্রিজ

৫) রাজবন বিহারঃ রাঙ্গামাটি ঘুরতে গেলে আবশ্যই রাঙ্গামাটির ঐতিয্যবাহী রাজবন বিহার ঘুরে আসবেন।এটি রাঙ্গামাটি জেলার চাকমাসহ অন্যান্য উপজাতীদের প্রধান বিহার। মূলত পাশ্চাত্য ধাচের নৈর্মান কৌশল ও স্থাপত্যের কারনে পর্যটকদের আকর্ষন এই বিহারটি। বিহারে গেলে বনভান্তেরর (ধর্মগুরু) মমি দেখে আসবেন। রাজবন বিহারের পাশেই চাকমা রাজার বাড়ি।রাজবাড়ি যেতে নৌকা পারাপার জনপ্রতি ৫ টাকা। শহরের বনরূপা থেকে রাজবন বিহারের সিএনজি ভাড়া ৫০ টাকা, তবলছড়ি থেকে ১২০ টাকা।
রাজবন বিহার

*** রিজার্ভ বাজার থেকে ১৫০০ টাকায় বোট নিয়ে উপরের ৩/৪ টি স্পট সাথে টুকটুকি ইকো ভিলেজ, চাংপাং, পেদাটিংটিং একসাথে ঘুরতে পারেন। তবে শেষ ৩ টি স্পট মুলত দ্বীপের মধ্যে খাবার রেস্ট্যুরেন্ট।খাবার সামান্য কস্টলি হলেও পরিবেশ ও পাহাড়ি ধাচের কিছু খাবারের জন্য অন্তঃত একবেলা এখানে খেয়ে নিবেন।

৬) চাকমা রাজার বাড়িঃ রাজবন বিহারের পাশেই রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি। চারপশে হ্রদ দ্বারা বেষ্টিত এই রাজবাড়িতে রয়েছে কাচারি, রাজ কার্যালয়, রাজার বাসভবন, চাকমা রাজা কর্তৃক উদ্ধারকৃত মোঘল আমলের ফঁতে খার সজ্জিত কামান, সবুজ ঘন বাঁশঝাড় ও আরও অনেককিছু। এখানে দেখেতে পাবেন হাতে বোনা কাপড় নিয়ে বসে আছে কিছু স্থানীয় আদিবাসি। কাপড়ের মান ভাল। প্রয়োজনে কেনাকাটা করতে পারেন। বতর্মানে চাকমা সাকেল চিফ রাজা ব্যরিষ্টার দেবাষীস রায় ও তার মা রানি আরতি রায় এই রাজবাড়িতে থাকেন। যেতে নৌকা পারাপারজনপ্রতি ৫ টাকা। শহরের বনরূপা থেকে রাজবন বিহারের সিএনজি ভাড়া৫০ টাকা, তবলছড়ি থেকে ১২০ টাকা।লোকাল সিএনজি জনপ্রতি ২০ টাকা নিবে।

৭) শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্কঃ কাপ্তাই অবস্থিত পার্কটিতে রয়েছে বাংলাদেশের ধীর্ঘতম (২.৫ কিঃমিঃ) ক্যবল কার।পার্কে প্রবেশ ফি ২৩ টাকা এবং ক্যাবল কারের টিকেট ফি ২৩০ জনপ্রতি টাকা (বাচ্চাদের ১১৫ টাকা) টাকার পরিমান একটু বেশি মনে হলেও ১৫ মিনিটের এক অসাধারন এডভ্যাঞ্চার উপভোগ করবেন এই ক্যবল কার ভ্রমনে। রাঙ্গামাটি হতে ইকো পার্কের বাস ভাড়া জনপ্রতি ৬০ টাকা।
শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্ক

৮) ঝুম রেস্তোরাঃ কর্ণফুলী নদীর তীরে অবস্থিত এই ট্যুরিস্ট স্পটটি শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্ক থেকে ৬ কিঃমিঃ দূরে অবস্থিত। প্রবেশ ফি ১০ টাকা।এখানে বসে উপভোগ করবেন পাহাড়ী নদী, নদীর বাক, পাহাড় এবং চা বাগান। দুপুরের খাবার এখানেই সেরে নিবেন। আর নৌকায় নদী ভ্রমন মোটেও মিস করবেন না।নদীর দুই পাশে খাড়া পাহাড় ও অরণ্যের কারনে বাংলাদেশের যে কোন নদী অপেক্ষা এখানে নৌ ভ্রমনের স্বাদই আলাদা।
ঝুম রেস্তোরা

৯) চিৎমরম গ্রাম ও টাওয়ারঃ ঝুম রেস্তরা হতে ৪ কিঃমিঃ দূরে চিৎমরম। এখানে রয়েছে বনবিভাগের নির্মিত ২ টি টাওয়ার। দূরদূরান্তের পাহাড়, কাপ্তাই লেক, কর্নফুলী নদী উপভোগ করা যাবে এই পাহাড় থেকে। হাতে সময় থাকলে নদী পাড় হয়ে ঘুরে আসতে পারেন চিৎমরম গ্রামে।মার্মা অধ্যুষিত এই গ্রামে মার্মাদের কৃষ্টি-কালচার দেখার পাশাপাশি চিৎমরম মন্দিরও ঘুরে দেখতে পারেন।

 *** রাঙ্গামাটি হতে ১৫০০-২০০০ টাকায় সিএনজি অথবা ৩০০০-৪০০০ টাকায় মাইক্রবাস রিজার্ভ নিয়ে কাপ্তাই উপজেলার শেখ রাসেল এভিয়ারী এন্ড ইকো পার্ক,ঝুম রেস্তোরা,চিৎমরম গ্রাম ও টাওয়ার দেখতে পারেন।রিজার্ভ গাড়িতে অসাধারন প্রাকৃতিক সৌন্দয্যে ভরপুর রাঙ্গামাটি-কাপ্তাই এর নতুন রাস্তা ভ্রমন করতে পারেন যা বাসে ভ্রমনে সম্ভব নয়। আর আগে থেকেই অনুমতি নিয়ে আসলে কাপ্তাই এ জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও কর্ণফুলী পেপার মিল ঘুরে দেখতে পারেন।



১০) পেদা টিং টিংঃ এটি একটি রেষ্টুরেন্ট যার অর্ হল, পেট পুরে খাওয়া। তবে এর জন্য বেশ খরচ করতে হবে। এটি বেশ দামি খাবারের দোকান। শুধু মাত্র খাবার জন্য এখানে না যাওয়ায় ভাল। এতে পয়সা সময় দুটোই বাঁচবে।



আরও দর্শনীয় স্থানঃ উল্লেখিত জায়গাগুলো ছাড়াও আর কিছু সুন্দর দেখার মত জায়গা রয়েছে রাঙ্গামাটিতে। এখানে প্রতি বুধ ও শনি বার থবলাছড়ি চাকমা বাজার বলে একটা বাজার তথা হাট বসে। এটা রঙ্গামাটি শহরে উপজাতীয় প্রধান বাজার। নানা রকমের উপজাতীয় পন্যের সমাহার ঘটে এখানে। তাছাড়া সময় থাকলে কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও জাতীয় উদ্যান ঘুরে আসতে পারেন।

*** রাঙ্গামাটি বেড়াতে আসলে অবশ্যই একদিন কাপ্তাই উপজেলার জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত।



ভ্রমনের প্রস্তুতিঃ হোঠেলে কিছুক্ষন বিশ্রাম নিয়ে বের হয়ে পড়ুন যত সকাল সকাল বের হওয়া সম্ভব। আমরা বের হয়ে পড়তাম সকাল ৮ টার দিকে। নাস্তা সেরে ঠিক করে নিন কোথা কোথায় যাবেন? রাঙ্গামাটির প্রায় সবগুলো স্পটেই ইন্জিন চালিত নৌকায় যাওয়া যায়। তাই সারাদিনের জন্য একটি ইন্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করে নিতে পারেন। তবে অবশ্যই দালালদের পাল্লায় পড়বেন না। বেশ কয়েকটি মাঝির সাথে কথা বলে তারপর ঠিক করে নিন ভাড়া। আমরা সারা দিনের জন্য এরকম একটি নৌকা ভাড়া করেছিলাম ১৬০০ টাকায়। তেল খরচ সহ।তাছাড়াও বিভিন্ন স্পটে নৌকা পার্কিং ও টিকেট এর একটি খরচ আছে সেটি মনে রাখবেন। তাই মাঝিদের মিষ্টি কথায় ভুলবেন না।

কোথায় থাকবেন?

১) রংধনু গেস্ট হাউজঃ ভাড়া ফযামিলি বেড ৬৫০ টাকা, কাপল বেড ৫০০ টাকা, ফোনঃ ০১৮১৬৭১২৬২২, ০১৭১২৩৯২৪৩০

২)পর্যটন মোটেলঃ রাঙ্গামাটি ঝুলন্ত ব্রিজের পাশেই অবস্থিত।ভাড়া নন এসি টুইন বেড- ১২০০ টাকা, এসি টিন বেড- ২০০০ টাকা। ফোন- ০৩৫১-৬৩১২৬ ওয়েবসাইট- Click This Link

৩) হোটেল গ্রিন ক্যাসেলঃ রিজার্ভ বাজারে অবস্থিত। ভাড়া নন এসিঃ সিঙ্গেল বেড- ৮০০ টাকা, কাপল বেড- ১০০০ টাকা, ত্রিপল বেড ১২০০ টাকা। এসি- কাপল বেড-১৬০০, ত্রিপল বেড ২০০০ টাকা। যোগাযোগঃ ০৩৫১-৬১২০

৪) হোটেল সুফিয়াঃ ০১৫৫৩৪০৯১৪৯, ফিসারী ঘাট, কাঁঠালতলী, রাঙ্গামাটি।

৫) হোটেল লেকসিটিঃ ০১৮১৭৮৩৬৮৪, ভাড়া- ৬০০-১২০০ টাকা।

এছাড়াও অন্যান্য কিছু হোটেল আছে যেগুলো ৬০০- ৭০০ টাকা/ ২ বেড

কিভাবে যাবেন ?
ঢাকা হতেঃ ঢাকার ফকিরাপুল মোড় /সায়দাবাদ জনপদের মাথায় রাঙ্গামাটিগামী অসংখ্য বাস কাউন্টারের অবস্থান। সকল বাসই সকাল ৮.০০ হতে ৯.০০ টা এবং রাত ৮.৩০ হতে ১১.০০ এর মধ্যে ঢাকা ছাড়ে। ভাড়াঃ ঢাকা-রাঙ্গামাটিঃ এসি ৯০০ টাকা (শ্যামলী), বিআরটিসি এসি ৭০০ টাকা, নন এসি সকল বাস- ৬২০ টাকা।

চট্টগ্রাম হতেঃ চট্টগ্রামের অক্সিজেন মোড়ে রাঙ্গামাটিগামী বাস কাউন্টার সমূহের অবস্থান। এখানে লোকাল ও ডাইরেক্ট দুই রকমের বাস পাওয়া যায়। ভাড়া সামান্য বেশি হলেও ডাইরেক্ট বাসে উঠাই বুদ্ধিমানের কাজ। ভাড়াঃ চট্টগ্রাম- রাঙ্গামাটিঃ ১২০ টাকা



যা যা সংগে রাখবেনঃ পাহাড়ে চলার সময় আপনার এনার্জী প্রচুর খরচ হবে। তাই পানি ও নাস্তার ব্যবস্থা রাখতে হবে ব্যাকআপ হিসাবে, ফ্লাক্সে করে চা অথবা কফি নিতে পারেন, গোসলের জন্য আলাদা জামা কাপড়, কেইডস ও স্পন্জ এর স্যোন্ডেল, ফাষ্ট এইড বক্স ও টর্চ লাইট। (কারন পাহাড়ে কখন হুট করে সন্ধ্যা লাগবে টের ও পাবেন না)।

সর্বশেষে
“কবে যাব পাহাড়ে আহারে আহারে, কবে পাব তাহার দেখা আহারে আহারে”অথবা

“লাল পাহাড়ের দেশে যা, রাঙ্গা মটির দেশে যাই, ত্থাক তুকে মানাইছে না রে, ইক্কেবারে মানাইছে না রে” (আমি অবশ্য এই গানটা শুনেছিলাম)

গানটি প্লে করুন আপনার তোলা অসংখ্য ছবির স্লাইড শো দেখতে দেখতে আর ভ্রমনের সুখস্মৃতি করতে করতে ফেরত আসুন।


========================================================================

মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।


“রাঙ্গামাটি” প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। এখানকার লেক, ঝরনা, নীল আকাশ, পাহাড় সর্বপরি আদিবাসি মানুষের সাধারন সহজ-সরল জীবন আপনাকে বিমহিত করবে।

Post a Comment

  1. একটা কাপলের জন্য সীতাকুন্ড যাওয়া এবং থাকা কি নিরাপদ???

    ReplyDelete
    Replies
    1. সীতাকুন্ড দিনের দিন ঘুরে আসা যাবে... থাকার মত জায়গা না সীতাকুন্ড... ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য..

      Delete

[blogger]

Author Name

{picture#https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1196479430442738} YOUR_PROFILE_DESCRIPTION {facebook#https://www.facebook.com/alwasikbillah} {twitter#https://twitter.com/awasikb} {google#https://plus.google.com/112469283873821392454} {instagram#https://www.instagram.com/awasikb}

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.