পর্ব-৮ঃ কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেন-৩



অল্প খরচে ট্যুর প্ল্যান জানতে সবসময় Tour on Budget এর সাথে থাকুন।



যখন তারা দেবি স্টেশনটিতে আসলো প্রায় সব যাত্রীই সেখানে নেমে গেল। 


তবে সেতুর সদ্য আন্টি আর তার যুবক ছেলে, আর সেতুর সদ্য ছোট ভাই আকাশদের পরিবার সিমলাতে নামবে। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী পরিবার সমেতে এখানে নেমে গেলেও সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর কাজিন পঙ্কজদা থেকে গেলেন আমাদেরকে হেল্প করার জন্য।


ট্রেন ঘুরে ঘুরে শেষ পর্যন্ত যখন সিমলা স্টেশনে আসলো তখন সন্ধ্যা সাড়ে ছটা বেজে গেছে। ৭,১০০ ফূট উঁচু খুবই সুন্দর পাহাড়ি এক রেল স্টেশন সিমলা। 


স্টেশনে লাল পোশাকের কুলি আর হোটেলের দালাল ঘুরঘুর করছে। সেসবকে পাশ কাটিয়ে পঙ্কজদার পিছু আমরা বাইরে বের হয়ে এলাম। 


পাহাড়ি হলেও স্টেশনটি বেশ বড়। এক জায়গায় দেখি ‘রেল মোটর’ ট্রেনটি ঘোরানোর ব্যাবস্থা রয়েছে।


স্টেশনের বাইরে অনেকগুলি ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে আছে। সেসবকে পাশ কাটিয়ে আমরা পঙ্কজদার পিছু পিছু হেঁটে রাস্তা দিয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। একটা শহর যে এতো সুন্দর হতে পারে তা সিমলায় না আসলে আমি জানতাম না। এটার কাছে দার্জিলিং কিছু না। 


কিছুদূর চলার পর একটা সুদৃশ্য ভবন দেখিয়ে পঙ্কজদা বললেন এটা নাকি হিমাচল প্রদেশের বিধানসভা ভবন। ব্যাপারটিতো আমার কাছে বিশ্বাসই হতে চায়নি। কারন আমি ভবনটির চারপাশে কোন নিরাপত্তাকর্মীতো দূরে থাকুক একটা ট্রেফিক পুলিশও খুঁজে পায়নি। আর আমাদের সংসদ ভবনের দু’কিলোমিটারের মধ্যে প্রবেশ নিষেধ! 


বিধানসভা ভবনটিকে পাশ কাটিয়ে আমরা আরো উপরের দিকে হেঁটে উঠলাম। তারপর কয়েকটা সিড়ি নেমে এক সাইবার ক্যাফের পাশ কাটিয়ে চিপা একটা গলির মধ্যে দিয়ে গন্তব্যে পৌছালাম। এটি পঙ্কজদার পরিচিত এক হোটেল। হোটেলটির নাম হচ্ছে HOTEL DUKE. দুটো ডাবল বেডের বিশাল রুমটির ভাড়া ৬০০রুপি, গরম পানি সহ এটাচট বাথরুম। সেতু পঙ্কজদাকে অনুরোধ করলো ভাড়া আরো ১০০রুপি কমানোর জন্য। কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি এর চাইতে কম কিভাবে হতে পারে। তবে সমস্যা হলো অন্য জায়গায়। নাম এন্ট্রি করার সময় হোটেলের লোক জানালো যে তাদের হোটেলে বিদেশী গেস্ট রাখার অনুমতি নেই। সকালে পুলিশ এসে চেক করে বিদেশী অতিথি পেলে হোটেলের লাইসেন্স বাতিল করে দেবে। তখন আমরা পঙ্কজদার আত্নীয় হিসাবে তার নাম ঠিকানা ব্যাবহার করে হোটেলের খাতায় নাম এন্ট্রি করলাম।

রুমে ব্যাগ রেখে পঙ্কজদাকে নিয়ে বের হলাম খাওয়া দাওয়া করার জন্য। বের হবার সময় সবার জন্য হোটেলের কার্ড চেয়ে নিয়েছি। সিমলা কালিবাড়িকে পাশ কাটিয়ে আমরা এগিয়ে চললাম সামনের দিকে। 


রাস্তায় দেখি বিভিন্ন সাইজের বানর মারামারি করছে। লোয়ার বাজারের রাস্তায় এক ভেজ রেস্তোরাঁয় গিয়ে বসলাম। পঙ্কজদা আমাদেরকে বসিয়ে রেখেই বিদায় নিলেন। কাল সকালে আবার আসবেন কথা দিলেন। বেচারাকে এখন বাসে করে অনেকদূর ফেরত যেতে হবে। শুধুমাত্র আমাদের জন্যই নিজের স্টেশনে না থেমে তিনি আমাদের সাথে সিমলা পর্যন্ত এসেছেন। যে ইন্ডিয়ানরা সহযাত্রীদের সাথে কথা পর্যন্ত বলে না সেখানে সেতুর জাদুতে পঙ্কজদা আমাদের জন্য কতো কিই না করলো। 


খাইলাম পেট ভরে। সেতু তার স্বভাবমতো এটা ওটার অর্ডার দিয়ে যাচ্ছে আর আমরাও সেগুলোর স্বদগতি করে চলেছি। রেস্তোরাটির পাশেই সাইবাবার ধর্মাবলম্বীদের উপসনা গৃহ। খাওয়ার ফাকে ফাকে তাদের উপসনা উপভোগ করে চলেছি। ভেজ খাবার সত্যিই খুব মুখরোচক। খাবারের অর্ডার দিলে সঙ্গে সঙ্গে তা রান্না করে গরম গরম হাজির করে। সারাদিন পর গরম ভাত খেয়ে কি যে তৃপ্তি পেলাম তা বলার মতো না। ভোজন শেষে ভাগাভাগি করে বিল চুকিয়ে বের হয়ে এলাম। সেতু আর নিয়ন নাকি খুব ক্লান্ত। তারা চললো হোটেলের দিকে। আর আমি আগের রাতে না ঘুমিয়ে সারাদিন দাঁড়িয়ে ট্রেন জার্নি করেও ততোটা ক্লান্ত নয়। আমি চললাম ম্যালের দিকে।


রাত প্রায় নটা বাজে। জায়গাটা একদম ফাঁকা।


আমি ঘুরে ঘুরে ইংরেজ স্থাপনা দেখছি। আলো ঝলমলে এসব ভবন দেখতে খুবই ভালো লাগছে। বেশ ঠান্ডা পড়েছে।



হাটতে হাটতে চার্চ পর্যন্ত গেলাম। হলুদ রঙের ভবনটিতে হলুদ আলো পড়েছে, দেখতে খুব সুন্দর । 




পাশেই রয়েছে সিমলার পাবলিক লাইব্রেরি। এসব দেখতে দেখতেই একটা সমস্যা হয়ে গেল। ঠান্ডা আবহাওয়া আমার পেটে একেবারেই সহ্য হয়না। পেটে এমন চাপ অনুভব করলাম যে হেঁটে হোটেলে ফিরবো সে সাহস করলাম না। প্রায় দৌড়ে চললাম। পথ যেন ফুরাচ্ছে না। অবশেষে হোটেলে পৌছাতে পারলাম। প্যান্টের বেল্ট খুলতে খুলতে রুমে ঢুকলাম। কিন্তু বিধি বাম! সেতু রয়েছে টয়লেটে। আমার কাতর কন্ঠে অনুনয় বিনয় শুনে বের হয়ে এলো ও। কিন্তু বের হলো একেবেরে দিগম্বর হয়ে, শুধু প্যান্টটা সামনে ধরে রেখে। মনে হলো অর দুগালে দুটো চুমু দিই, কারন প্যান্ট পড়তে গিয়ে ও যদি আর ৫সেকেন্ডও সময় নিতো তাহলে আমার ভয়াবহ সর্বনাশ হয়ে যেত। কোন রকমে ভেতরে ঢুকলাম অকে টপকে। আহ কি শান্তি! 

সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার জন্য ভাবলাম গোসল করে ফেলি। গিজার না চালিয়ে দুমগ পানি গায়ে ঢেলে দেখি যে ভয়াবহ ঠান্ডা। গোসল করা বাদ দিয়ে কোন রকমে গা মুছে বের হলাম। কাপড় বদলে সোজা কম্বলের তলায়। আমি এবার এসে কোন মোবাইল সিম কিনিনি, খামাখা পয়সা খরচ। তাছাড়া ফোনে টাকা থাকলে শুধু মনে হয় দেশের এই দোস্তকে জানায় আমি এখন এখানে, ওই দোস্তকে জানায় আমি এখন ওখানে।কি দরকার! তবে সেতুরা সিম কিনেছে। ওদের ফোন থেকে আমার বাবার সাথে কথা বললাম। জানালাম আমি ভালো আছি। তারপর কম্বল মুড়ি দিয়ে চোখ বুজলাম। 



কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেন পর্বে মোট খরচঃ

১। কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেন ভাড়া =৫০ রুপি
২। সকালের টুকটাক খাওয়া=৩০ রুপি
৩। দুপুরে ট্রেনের সহযাত্রীরা খাওয়াইছে
৪। রাতের খাওয়া=৮০ রুপি
৫। আমার ভাগের হোটেল ভাড়া=২০০ রুপি
মোট=৩৬০ রুপি

১০০টাকায় ৮২ রুপি হিসাবে এই পর্বের মোট খরচ=৪৩৯ টাকা।

কালকা থেকে সিমলা টয় ট্রেন পর্বের আরো কতগুলো ছবি














========================================================================


মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।

সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলার জন্য ভাবলাম গোসল করে ফেলি। গিজার না চালিয়ে দুমগ পানি গায়ে ঢেলে দেখি যে ভয়াবহ ঠান্ডা। গোসল করা বাদ দিয়ে কোন রকমে গা মুছে বের হলাম। কাপড় বদলে সোজা কম্বলের তলায়। আমি এবার এসে কোন মোবাইল সিম কিনিনি, খামাখা পয়সা খরচ। তাছাড়া ফোনে টাকা থাকলে শুধু মনে হয় দেশের এই দোস্তকে জানায় আমি এখন এখানে, ওই দোস্তকে জানায় আমি এখন ওখানে।কি দরকার! তবে সেতুরা সিম কিনেছে। ওদের ফোন থেকে আমার বাবার সাথে কথা বললাম। জানালাম আমি ভালো আছি। তারপর কম্বল মুড়ি দিয়ে চোখ বুজলাম।

Post a Comment

[blogger]

Author Name

{picture#https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1196479430442738} YOUR_PROFILE_DESCRIPTION {facebook#https://www.facebook.com/alwasikbillah} {twitter#https://twitter.com/awasikb} {google#https://plus.google.com/112469283873821392454} {instagram#https://www.instagram.com/awasikb}

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.