চলুন যাই নরসিংদীর লক্ষ্মণ সাহার জমিদার বাড়িতে

লক্ষ্মণ সাহার জমিদার বাড়ি

যারা প্রাচীন জমিদার বাড়ির ঐতিহ্যে হারিয়ে যেতে চান, যারা দেখত চান জমিদার বাড়ির কারুকার্যের শৈল্পিক নৈপুন্যতা,যারা উপলব্ধি করতে চান পুরোনো দিনের জমিদারী বাড়ির নিরব নিস্তব্ধতা তারা চলে আসতে পারেন ঢাকার কাছেই নরসিংদী জেলাস্থ পলাশ উপজেলার ডাংগা বাজার সংলগ্ন লক্ষ্মণ সাহার জমিদার বাড়িতে। যা বর্তমানে উকিলের বাড়ি নামেই পরিচিত।

জমিদার বাড়ির অতীত ইতিহাস:তৎকালীন ভারতবর্ষে এই এলাকাটি ছিল দেবোত্তর হিসেবে। মূলত দেবোত্তর বলতে বুঝায় ওয়াকফাহ্ জমি। ঐ সময়ে দেবোত্তর জমি হলে জামিদারকে খাজনা দেওয়া লাগতোনা।এই জমিদার বাড়িটি তৈরি করেছিলেন জমিদার লক্ষ্মণ সাহা। মূলত তিনি ছিলেন প্রধান জমিদারের অধিনস্থ সাব-জমিদার। জমিদার লক্ষ্মণ সাহার ছিল তিন(০৩) ছেলে।নিকুঞ্জ সাহা,পেরিমোহন সাহা ও বঙ্কু সাহা। বঙ্কু সাহা ভারত ভাগের সময় এখান থেকে ভারতে চলে যান।থেকে যায় দুই ভাই। পাকিস্থান থেকে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হওয়ার কিছু পূর্বে নিকুঞ্জ সাহাও ভারতে চলে য়ায়। তখন থেকে যায় পেরিমোহন সাহা। এই পেরিমোহন সাহার ছিল এক(০১) ছেলে।তার নাম ছিলো বৌদ্ধ নারায়ন সাহা। বৌদ্ধ নারায়ন সাহার কাছ থেকে বাড়িটি ক্রয় করেন আহম্মদ আলী (উকিল)। মূলত আহম্মদ আলী সাহেব উকালতি পেশার সাথে সংযুক্ত ছিলেন বিধায় বর্তমানে এই জমিদার বাড়িটি উকিলের বাড়ি হিসেবেই বেশি পরিচিত। লক্ষ্মণ সাহার বংশধরের একাংশ বর্তমানে নারায়ণগঞ্জ শহরে বসবাস করছে।ডে-ট্যুর এর জন্যে অত্যন্ত সুন্দর একটি জায়গা।

যা যা রয়েছে এই জমিদার বাড়িতে : 
একটি পূর্ণাঙ্গ শৈল্পিক জমিদার বাড়ি, এর পাশেই ছোট্ট আরেকটি কারুকার্য খচিত ঘর, একটি অর্ধনির্মিত প্রাচীন বাড়ি। জমিদার বাড়ির পেছনে রয়েছে গাছগাছালি যুক্ত বাগান।জমিদার বাড়ি সহ এই বাগানের চারিদিকটা উঁচু প্রাচীর দ্বারা বেষ্টিত। রয়েছে সেই সময়ই তৈরি করা জমিদার বাড়ির সুন্দর একটি পুকুর আর সান বাধানো পুকুর ঘাট। তাছাড়া পুকুর ঘাটে ঢুকার সময় নিচে তাকালে দেখতে পাবেন তৎকালীন আমলের মূল্যবান কষ্টি পাথরের ঢালাই। পুকুরের চারপাশে পূঁজা করার জন্যে চারটি মোড ছিলো। ২-৩ টা নষ্ট হয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে। একটা অবশিষ্ট আছে যা পুকুর ঘাটেই দেখা মিলবে।পড়ন্ত বিকেলে পুকুর পাড়ের আড্ডার মূহূর্তটা না হয় বাস্তবেই জানবেন।জমিদার বাড়িটির আশেপাশে এখনও তেমন বাড়ি ঘর নেই। যারা একটু ভৌতিকতা টাইপ নিরিবিলি পরিবেশ ভালোবাসেন তারা অবশ্যই আসবেন।আশা করি আপনার সময়টা অনেক ভালোই কাটবে।
আর হাতে সময় থাকলে নৌকা নিয়ে ঘুুঁরতে পারেন ডাংগা বাজারের সাথেই প্রবাহমান শীতলক্ষ্যা নদীতে।

যাবেন যে ভাবে: 
যাদের ঢাকা গুলিস্তান থেকে আসতে সহজ হবে ওনারা গুলিস্তান সার্জেন্ট আহাদ পুলিশ বক্সের সামনে থেকে মেঘালয় লাক্সারী বাসের মাধবদীর টিকিট কাটবেন। মূলত মাধবদীর টিকিটে আপনি পাঁচদোনা মোড় নামতে পারবেন।অবশ্যই বাস সুপারভাইজারকে বলে রাখবেন যেন পাঁচদোনা মোড় নামায়।বোনাস হিসেবে পাঁচদোনা বাজারে অবস্থিত পবিত্র কোরআন শরীফের প্রথম বাংলা অনুবাদকারী ভাই গিরিশ চন্দ্র সেনের বাড়িটি দেখে আসতে পারেন। পাঁচদোনা মোড় নেমে যে কাউকে বললেই আপনাকে ডাংগা সিএনজি ষ্টেন্ড দেখিয়ে দিবে।এক সিএনজিতে সর্বোচ্চ পাঁচ জন। ভাড়া নিবে জনপ্রতি ২০ টাকা। ডাংগা পৌঁছাতে সময় লাগবে ২০-২৫ মিনিট। ডাংগা বাজার নেমে রিক্সা অথবা হেঁটেও যেতে পারবেন উকিলের জমিদার বাড়িতে।ডাংগা বাজার থেকে ১ কিলোমিটার দূরত্ব। সমস্যা হলে কাউকে জিগ্যেস করে জেনে নিবেন। তাছাড়া সাহায্যের জন্যে আমিতো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আছিই।

আর যারা মহাখালী বনানী উত্তরা থেকে আসবেন ওনারা চাইলে কুড়িল বিশ্বরোড থেকে ৩০০ ফিট দিয়ে কাঞ্চন ব্রিজ পার হয়েই মায়ার বাড়ি মোড়ে নামবেন। মোড়েই ডাংগা আসার জন্যে চার্জের অটোগুলো দাড়িয়ে থাকে। জন প্রতি ভাড়া অথবা রিজার্ভ ও নিয়ে আসতে পারবেন। ভাড়া আলোচনা করে নিবেন।ডাংগা বাজার নেমে রিক্সা অথবা হেঁটেও যেতে পারবেন উকিলের জমিদার বাড়িতে।সমস্যা হলে কাউকে জিগ্যেস করে জেনে নিবেন। তাছাড়া সাহায্যের জন্যে আমিতো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আছিই।

যারা টংগী ও আবদুল্লাহপুর থেকে আসবেন তারা সরাসরি বাসে অথবা লেগুনায় কালিগঞ্জ চলে আসবেন। কালিগঞ্জ নদীর ঘাটে এসে নৌকায় নদী পার হয়ে এই পাড় আসবেন।না চিনলে কাউকে জিগ্যেস করে নিবেন যে ডাংগা যেতে কোন ঘাটে পার হবেন। নদী পার হয়ে ডাংগা আসার সরাসরি রিক্সা,অটো ও সিএনজি পাবেন।ঘাট থেকে ডাংগা বাজার মাত্র ৪-৫ কিলোমিটার।ডাংগা বাজার নেমে রিক্সা অথবা হেঁটেও যেতে পারবেন উকিলের জমিদার বাড়িতে।সমস্যা হলে কাউকে জিগ্যেস করে জেনে নিবেন। তাছাড়া সাহায্যের জন্যে আমিতো প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে আছিই।

খাবেন কোথায় :
ডাংগা বাজারেই দুপুরের খাবার সেরে নিবেন। হোটেলের রান্না গুলো আশা করি খারাপ লাগবেনা। যদি দুপুর ১২ টা থেকে ১ টার মধ্যে ডাংগা বাজারে থাকেন তাহলে আব্দুল হাই (শিমুল ভাইদের চপের দোকান)এর আলুর চপ খেতে ভুলবেন না। সাথে দইটাও খাবেন। খেয়ে অবশ্যই মতামত জানাবেন। আর বাজারে দুপুরে খাবার হোটেল গুলো এই চপের দোকানের সাথেই।

অনুরোধ :
কেউ ছবি তুলতে গিয়ে এর শৈল্পিক সৌন্দর্য নষ্ট করবেন না। পুরোনো দিনের জমিদার বাড়ি তাই হইহল্লোর না করে সাবধানতা অবলম্বন করাটাই শ্রেয়।

এই জমিদার বাড়ির অতীতের ইতিহাস বর্ননা প্রদান কারী:
সিদ্দিক খন্দকার। যিনি ছোট সময় বৌদ্ধ নারায়ন সাহার সাথে কিছুটা সময় খেলাধুলা করেছেন ও সময় কাটিয়েছেন। আমি উনার কাছে চির কৃতজ্ঞ। ধন্যবাদ সারোয়ার ভাই ও মুরাদ ভাইকে আমাকে উৎসাহিত করার জন্যে।


========================================================================

মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।

Post a Comment

[blogger]

Author Name

{picture#https://www.facebook.com/photo.php?fbid=1196479430442738} YOUR_PROFILE_DESCRIPTION {facebook#https://www.facebook.com/alwasikbillah} {twitter#https://twitter.com/awasikb} {google#https://plus.google.com/112469283873821392454} {instagram#https://www.instagram.com/awasikb}

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.