সাগরকন্যা কুয়াকাটা |
যারা বিভিন্ন ছুটিতে ঢাকা থেকে সাগরকন্যা কুয়াকাটায় বেড়িয়ে আসতে চান, তাদের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় তথ্য :
এই নোটে যা আছে -
- ঢাকা থেকে কি কি উপায়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়?
- কোথা থেকে বাস ছাড়ে? বাসের সময়সূচি?? বাস ভাড়া?? পৌঁছাতে কতক্ষন লাগে??
- লঞ্চ সার্ভিস ? সময়সূচি? ভাড়া? কতক্ষন লাগে?
- লঞ্চ দিয়ে ভায়া পটুয়াখালি হয়ে যাওয়ার উপায়? পটুয়াখালির বাস সার্ভিস এর তথ্য।
- লঞ্চ দিয়ে ভায়া বরিশাল হয়ে কিভাবে যাওয়া যায়?
- আনান্য স্থান থেকে কুয়াকাটা যাবার ব্যবস্থা
- রাস্তা-ঘাটের কি অবস্থা?
- কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান কি কি?
- ফাতরার চর আর যা যা চর আছে তার তথ্য
- কুয়াকাটার হোটেল গুলোর তথ্য?
- খাবার দাবার এর তথ্য
- খরচ
- টিপস
- গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
=====================================================
ঢাকা থেকে কি কি উপায়ে কুয়াকাটা যাওয়া যায়?
ঢাকা থেকে দুইভাবে কুয়াকাটা যাওয়া যায়
- বাসে করে ডাইরেক্ট কুয়াকাটা
- লঞ্চে করে পটুয়াখালী বা বরিশাল হয়ে বাস বা মটর সাইকেলে করে কুয়াকাটা।
কোথা থেকে বাস ছাড়ে? বাসের সময়সূচি?? বাস ভাড়া?? পৌঁছাতে কতক্ষন লাগে??
ঢাকা থেকে বেশ কয়েকটি বাস এখন সরাসরি কুয়াকাটা যায়। ঢাকা থেকে "সাকুরা পরিবহন" , ছাড়াও কুয়াকাটা এক্সপ্রেস আর বিআরটিসি পরিবহনের বাস সরাসরি কুয়াকাটায় যায়। আপনি এসব বাসে গেলে আপনাকে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের সামনেই নামিয়ে দিবে। ‘সাকুরা’ পরিবহনের বাসটা ভালো সার্ভিস দেয়, গাবতলী থেকে ছাড়ে। ঢাকা থেকে ছাড়ে রাত ৯টার দিকে, তবে কুয়াকাটা থেকে ঠিক সন্ধ্যা ৬.৩০ এ, এর পর গেলে বাস মিস করবেন। ঢাকা থেকে কুয়াকাটা বাসে যেতে মোট সময় লাগে প্রায় ১৩ ঘন্টা তবে কুয়াকাটা থেকে আসতেসময় লাগে প্রায় ১১ঘন্টা।
তাছাড়া সোনারতরী,গোল্ডেনলাইন সহ অনেক বাস গাবতলী থেকে কলাপাড়া যায়, সেখান থেকেও বাস অথবা অটোতে কুয়াকাটা যেতে পারবেন। সার্ভিস ভালো। মিরপুর অথবা উত্তরার মানুষ জন ঈগলে করে কলাপাড়া যেতে পারবেন।
লঞ্চ সার্ভিস ? সময়সূচি? ভাড়া? কতক্ষন লাগে?
লঞ্চ দিয়ে ভায়া পটুয়াখালি হয়ে যাওয়ার উপায়? পটুয়াখালির বাস সার্ভিস এর তথ্য।
লঞ্চ অনেক ভালো একটা অপশন, ঢাকার সদরঘাট থেকে
সন্ধ্যা ৬টা ৩০ থেকে ৭টা ৩০ এর দিকে কুয়াকাটা ১, সুন্দরবন ৯/১১, জামাল ৫, কাজল ৭ ইত্যাদি লঞ্চ ছেড়ে যায়। সবদিন সব লঞ্চ পাবেন না কারন এগুলো একদিন ঢাকা থেকে ছেড়ে ফিরে আসে পরদিন।
লঞ্চ ভাড়া ১৮০ টাকা করে (ডেক), আর কেবিনে গেলে ৯০০ টাকা সিঙ্গেল, ১৬০০ টাকা ডাবল, ৪৫০০টাকা ভিআইপি। আগে থেকে বুকিং দিয়ে না রাখলে কেবিন পাবেন না।৫টা৩০ থেকে ৬টা৩০ পর্যন্ত সৈকত, বাগেরহাট ২ নামের গলাচিপার কিছু লঞ্চ ছাড়ে যেগুলো ভায়া পটুয়াখালি হয়ে যায়। ভুলেও উঠবেননা। আগে ছাড়লেও সব ঘাট ধরে সবার পরে পৌছাবে।
লঞ্চ দিয়ে সকালে (৬টা-৭টা) পটুয়াখালী নেমে একটা রিক্সা(ভাড়া ৩০ টাকা) বা অটো (জনপ্রতি ২০টাকা) নিয়ে বাস স্ট্যান্ডে চলে আসতে হবে।
সেখানে খাওয়া দাওয়ার দোকান নাই :( তবে সকালের নাস্তা খেতে হলে আপনাকে একটু পিছিয়ে চৌরাস্তার মোড়ে যেতে হবে, সেখানে ভালো কিছু পরটা পাবেন, হোটেলগুলোর মান একদমই ভালো না।
এখান থেকে (চৌরাস্তা) মোটর সাইকেল পাওয়া যায়, এক মোটর সাইকেলে ২ জন জাত্রী বসা যাবে, ডাইরেক্ট কুয়াকাটা পর্যন্ত ভাড়া নিবে ৬০০-৮০০ টাকা (তুমুল দরদাম করতে হবে)।
সময় লাগবে প্রায় আড়াই ঘন্টা।
আর যারা মোটর সাইকেল দিয়ে যেতে চান না, তারা বাসে করে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে আবার আপনাদেরকে বাস স্ট্যান্ডে আসতে হবে, কুয়াকাটার বাসের টিকিট কাটতে হবে, ভাড়া নিবে ১৫০ টাকা।
পটুয়াখালি থেকে কলাপাড়া পর্যন্ত রাস্তা অসাধারণ, রীতিমতন বিমান নামতে পারবে এমন, রানওয়ের মতন চকচকে। কলাপাড়া পার হলেই সামনে পড়বে একটা ফেরী, জান পানি করা মিশনের শুরু এখানেই :( হেলতে দুলতে ঝাঁকি খেতে খেতে, আর তিনটা ফেরীতে অপেক্ষা করতে করতে কুয়াকাটা পৌঁছাতে সময় লেগে যাবে ২.৫ থেকে ৩.৫ ঘন্টার মতন।
লঞ্চ দিয়ে ভায়া বরিশাল হয়ে কিভাবে যাওয়া যায় ?
বরিশাল থেকে কুয়াকাটাঃ
ঢাকা থেকে বরিশাল এর লঞ্চ গুলো রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সদর ঘাট থেকে ছাড়ে। এর মধ্যে সুন্দর বন ৭/৮, সুরভী৮, পারাবত ১১, কীর্তনখোলা ১/২ লঞ্চ গুলো ভাল।
লঞ্চ গুলো বরিশাল পৌঁছায় ভোর ৫টার দিকে। ডেক ভাড়া ১৫০ টাকা, ডাবল কেবিন ১৬০০, ভিআইপি ৪৫০০।
বরিশাল থেকে সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়ার বাস ভাড়া ২২০ টাকা; ৪টা ফেরি পার হতে হবে, সময় লাগবে ৪-৫ ঘন্টা।
বরিশাল থেকে মাইক্রো বাস ভাড়া করে সরাসরি কুয়াকাটা পৌঁছানো সম্ভব। সেইক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বেশী পরবে। দামাদামি করলে ৩৫০০টাকার মধ্যে ভাড়া পাওয়া সম্ভব।সময় লাগবে ৩-৪ঘন্টা।
আনান্য স্থান থেকে কুয়াকাটা যাবার ব্যবস্থা
সৌদিয়ার বাস চট্টগ্রাম থেকে কলাপাড়া যায়।
খুলনায় আসার অনেক ভালো বাস পাওয়া যাবে।
খুলনা থেকে কুয়াকাটার উদ্দেশ্যে সকাল ৭ টায় একটি বিআরটিসি বাস ছাড়ে।
খুলনা থেকে যেতে সময় লাগে প্রায় ৭/৮ ঘন্টা।
খুলনা থেকে বাসভাড়া ২৭০ টাকা।
উত্তরবঙ্গ থেকে আসতে চাইলে সৈয়দপুর থেকে খুলনা পর্যন্ত রূপসা অথবা সীমান্ত আন্তঃনগর ট্রেনে করে আসতে পারবেন। রাত্রের টেনে আসলে সকাল ৭ টার বিআরটিসি বাসে করে কুয়াকাটা যেতে পারবেন।
রাস্তা-ঘাটের কি অবস্থা?
পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত রাস্তা বিশ্বমানের। আর বরিশাল হয়ে গেলে, বরিশাল থেকে পটুয়াখালি পর্যন্ত রাস্তা খুব একটা সুবিধার না, তবে একেবারে খারাপ ও না।
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থান কি কি?
কুয়াকাটার দর্শনীয় স্থানের মধ্যে পড়ে
৩৬ ফুট লম্বা স্বর্ণের (!) বৌদ্ধ মূর্তি
সাগরের পাশেই বেড়ীবাধের উপরে আরেকটা বৌদ্ধ মূর্তি,
শুটকিপল্লী এবং লেবুর চর
ফাতরার চর
লাল কাঁকড়ার দ্বীপ
মোহনীয় মায়াময়ী গঙ্গামতির চর, যেখানে দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় দেখা যায়।
যেই কুয়াটার নামে এই জায়গায় নামকরণ হয়েছে সেই কুয়া
(এটার অবস্থা খুবই খারাপ, লোকজন ময়লা ফেলে অস্থির করে রেখেছে)
আরো কিছু হয়তো আছে যা আমি জানি না।
কুয়াকাটা থেকে “সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডে” যাওয়া যায়, সেখানকার লোকজন ওটাকে “নাই বাম” বলে। “নাই বাম” মানে হলো কোনো তল নাই, অরথাত ওখানে নোঙ্গর ফেলা যায়না।
সবচাইতে ভালো হয় কুয়াকাটা সি-বিচ থেকে একটা ট্রলার সারাদিনের জন্য ১০০০-১২০০ টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন, তাহলে সে-ই সব যায়গা দেখিয়ে নিয়ে আসবে, তবে বিকেল্টা অবশ্যই লেবুর চর চরে কাটাবেন তারপর আশপাশের দোকান থেকে মাছ ভাজা খেয়ে হোটেলে ফিরবেন।
আমি একটা মাঝির নাম্বার দিতে পারি, সে অতীব সজ্জন মানুষ, তাঁর নাম ইদ্রিস – ০১৭৪৫৪২৬৯২৬...
এখানে যে জিনিসটা দেখে আমি সবচাইতে বেশী মুগ্ধ হয়েছি সেটা হলো এখানকার জেলেরা নৌকার নিচে চাকা লাগিয়ে সি-বিচে চালায়
কুয়াকাটার আশেপাশের চর ও তাদের বৈশিষ্ট্য
ঘুরাঘুরি করার মতন কয়েকটা সুন্দর চর রয়েছে –
* ফাতরার চর
(এখানকার গাছপালা কিছুটা হলুদ বর্ণের, আর বনের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলার পথটা অসম্ভব সুন্দর, বন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একসময়য় সাগরের দিকে বের হওয়া যায়, সেখানে একটা চুলা আছে যেখানে রাতে ক্যাম্পিং করে বারবিকিউ করা হয়...
* গঙ্গামতির চর
কুয়াকাটার সবচাইতে মায়াময় চর হলো এই গঙ্গামতির চর, মুল কুয়াকাটা থেকে এটাতে মোটরসাইকেল, ভ্যান এবং ট্রলারের করে যাওয়া যায়, এই চরে দুরন্ত সবুজ একটা বন রয়েছে, এই বলে বানর, শিয়াল আর অজগর সাপ পাওয়া যায়। কিছুদিন আগে এখানে অজগর সাপ ৩০টি ডিম ফুটিয়ে বাচা দিয়েছে, ওরা এখন মনের সুখে বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এই বনে কমলা গাছ, বরই গাছ আর কামরাঙ্গা গাছ রয়েছে, এখান থেকেই একি সাথে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়। যদি কেউ গঙ্গামতি চরের চরম মজাটা নিতে চান তাহলে খাল পার হয়ে চরের পূর্ব প্রান্তে চলে যাবেন – তখন বুঝবেন, জীবনে অবগাহণ করার মতন মোহনীয় যায়গা আসলেই আছে ।
* লাল কাঁকড়ার দ্বীপ
কুয়াকাটা থেকে ফাতরার চরের দিকে যেতে হাতের ডান পাশে পড়বে এই দ্বীপ, এখানে ভোর সকালে আসলে লাল কাঁকড়ার মিছিল দেখা যাবে, আবার গঙ্গামতি চরের পূর্ব পাশেও লাল কাঁকড়া অবাধে ঘুরে বেড়ায়। তাদের সাথে সাক্ষাতের সময় ঐ একটাই - প্রথম ভোরে...
আপডেটঃ লাল কাঁকড়ার দ্বীপে ভোরে বা সকালে গেলে লাল কাঁকড়ার দেখা পাওয়া টা কষ্টকর। সূর্যের তাপে বালু উত্তপ্ত হয়ে গেলে কাঁকড়া রা বাইরে বের হয়ে আসে। তাই, সকাল ১১ টার দিকে গেলেই শজে লাল কাঁকড়ার দৌড়া দৌড়ি উপভোগ করতে পারেন।
তবে খেয়াল রাখবেন, আপনার উপস্থিতি যেন কোন ভাবেই তাদের কে ক্ষতিগ্রস্থ না করে।
লেবুর চরঃ
লেবুর চর নামে একটা জায়গা থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। এক পাশে সমূদ্র আরেক পাশে তিন নদীর মোহনা, অপর পাশে উপকূলীয় বন, নদীর ওপারে দেখা যায় ফাত্রার বন- সব মিলিয়ে জায়গা টা অসাধারন। বাইকে করেই ঘুরে আসতে পারবেন সহজেই। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখা যায়।
কুয়াকাটার হোটেল গুলোর তথ্য
কুয়াকাটায় হোটেলের অভাব নাই।
মাথাপিছু ৩০০ থেকে শুরু করে ১৫০০ টাকার হোটেল পর্যন্ত রয়েছে।
একেবারে সী-বিচের কাছে কিছু হোটেল রয়েছে, এছাড়া পর্যটনের হোটেলও আছে। থাকা নিয়ে সমস্যা নাই, যেকোনো হোটেলে আরামে থাকা যাবে। যেহেতু সাগর এলাকা সুতরাং নিজের জিনিসপত্র একটু সাবধানে রাখাই ভালো...
খাবার দাবার এর তথ্য
এখানকার খাবার খুবই বাজে বলে মনে হয়েছে আমার কাছে। তবে সী-বিচের খুব কাছে একটা হোটেলগুলো খাবার রীতিমতন মুগ্ধকর, দামও কম। বেড়িবাধের উল্টা পাশের (শহর সাইডের) খাবার না খাওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। এখানকার চটপটি খুবই ভালো।
খরচ
কুয়াকাটায় খরচ তুলনামুলকভাবে বেশী। যাওয়া-আসা-থাকা-খাওয়া-ঘুরাঘুরি সব মিলিয়ে ২ দিনের জন্য প্রায় ৩০০০- ৫০০০টাকার মতন খরচ হতে পারে, ডেকে গেলে আর কিংস হোটেলে থাকলে ২৭০০-২৮০০ টাকাই অনেক।
টিপস
১ – কুয়াকাটা থেকে ঢাকার বাস ছাড়ে সন্ধ্যা ৬.৩০ মিনিটে, ঐ বাস মিস করলে ওইদিন আর ঢাকার মুখ দেখতে হবে না, কাজেই টাইমিংটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
২ – ক্যাম্পিং এর জন্য ফাতরার চর ভালো যায়গা, ঐখানে সিকিউরিটি আছে, গঙ্গামতির চর হলো বেস্ট, বাট ঐখানে সিকিউরিটি নাই, ডাকাতের আক্রমণে পড়ার সম্ভাবনা মোর দ্যান ৬০ %
৩-ট্রলারে করে সব জায়গায় যাওয়া যাবে না। আর সময় ও অনেক বেশী লাগবে। সেইক্ষেত্রে বাইক এ করে ঘুরে আসা যেতে পারে। বাইক গুলো ১৫ টা স্পট ঘুরিয়ে আনবে। বাইক এর চালক রাই আপনাকে খুঁজে নিবে। কষ্ট করে তাদের খুঁজতে হবে না। আপনার কাজ শুধু দামাদামি করা। দামাদামি করে ৫০০ টাকার মধ্যেই বাইক ঠিক করা যেতে পারে।
৪- আমতলী থেকে কুয়াকাটা বাসের ছাদে করে যাওয়া উত্তম।। রাস্তার দুইপাশের ছোট-মাঝারি-বড় হরেক আকারের হাজার খানেক পুকুর আপনাকে বিস্মিত এবং মুগ্ধ করবেই ।।
৫ – সাগরে ময়লা ফেলবেন না, আমাদের একটাই মাত্র সাগর – একেও যদি আমরা ঠিকমতন দেখেশুনে রাখতে না পারি তাহলে এর ব্যর্থতাঁর দায়ভার আমাদেরই নিতে হবে, আমরা আচার থেকে শুরু করে যাই খাই না কেনো, সবকিছুর প্যাকেট নিয়ে আসবো, একটা কনাও সাগরে ফেলবো না। এই সাগর আমাদের, একে পরিষ্কার রাখার দায়িত্বও আমাদের...
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
১) পটুয়াখালি সদরঘাটে নেমেই আপনি কয়েকটি হোটেল পাবেন যেখান থেকে সকালে নাস্তার পর্বটা সেরে নিতে পারেন।
২) ঢাকা থেকে ডেকে করে লঞ্চে পটুয়াখালী যেতে আপনার ২০০ টাকা খরচ পড়বে। কেবিনের চাইতে ডেকে করে যাওয়াই ভালো (যারা আয়েশিভাবে যেতে অনিচ্ছুক)। কেবিনগুলো যে তলায় থাকে তার সামনের (লঞ্চের সামনের দিকে) দিকের খালি যায়গাতে বসে-ঘুমিয়ে রাত পার করতে পারেন। সাথে করে চাদর বা স্লিপিং ব্যাগ নিয়ে গেলে ভালো হয়। রাতে খানিকটা ঠাণ্ডা অনুভূত হয়। রাতে চাঁদের আলোয় নদীর রূপ অনেক বেশি মোহনীয় হয়ে ওঠে। তারাভরা আকাশটাও সুন্দরভাবে উপভোগ করা যায়।
৩) পটুয়াখালি বাসস্ট্যান্ড থেকে কুয়াকাটায় সরাসরি বাস সার্ভিস চালু আছে। ডাইরেক্ট সার্ভিস বললেও এটা আসলে লোকাল সার্ভিস মানে দাঁড়িয়ে লোক নেয়। ভাড়া ১৪০ টাকা। যাত্রাপথে তিনটি ফেরি পার হতে হয়। ফেরির অপেক্ষায় ১ ঘন্টা বা তার কিছু বেশি সময় নষ্ট হতে পারে। অবশ্য নদীর উপর সেতুর কাজ চলছে। এটি সমাপ্ত হয়ে গেলে সরাসরি কোনো ঝামেলা ছাড়াই কুয়াকাটা পৌঁছানো সম্ভব হবে। মোটর সাইকেলে করে যেতে চাইলে অবশ্য অবশ্যই দরদাম করবেন। কারণ এখানকার মোটর সাইকেল চালকদেরকে আমার সুবিধের মনে হয়নি। তারা অনেক বেশি পকেট কাটায় ওস্তাদ। আর তাদের নিজেদের একটি সিন্ডিকেট আছে। সবাই বেশ জোটবদ্ধ থাকে।
৪) কুয়াকাটার হোটেলের খাবারের স্বাদ আমার কাছে খুব একটা ভালো মনে হয়নি। এর চাইতে কক্সবাজারের খাবার হোটেলগুলো অনেক ভালো। এদের রান্না ভালো হয়নি। তবে লেবু বাগানে মশলা দিয়ে কাঁকড়া ভাজা খেয়েছিলাম। ওটা দারুণ লেগেছিল। বলতে গেলে হোটেলের চাইতে ওটাই বেস্ট ছিল (যদিও আমি জীবনে প্রথমবারের মতো কাঁকড়া খেয়েছি)।
৫) কুয়াকাটা পৌঁছবার পর হাঁটতে গেলেই মোটর সাইকেলের চালকরা আপনাকে ছেঁকে ধরবে তাদের সেবা নেবার জন্য। এক্ষেত্রে কৌশলী হওয়া প্রয়োজন। অনেকে সারাদিন বিভিন্ন স্পটে ঘুরিয়ে আনার জন্য বিভিন্ন অংকের টাকা চাইবে। যা চাইবে আপনি মনে করবেন তার অর্ধেক বা সেটির চাইতেও কম টাকায় আপনি ঘুরে আসতে পারবেন। সেক্ষেত্রে ভেঙে ভেঙে যেতে হবে। যারা পয়সা বাঁচাতে চান তারা এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন। যেমন- আমি যখন কুয়াকাটা যাই তখন একজন মোটর সাইকেল চালক কুয়াকাটা হতে বরগুনার টেংরাগিরি ইকোপার্কে যেতে ১৮০০ টাকা চাচ্ছিল। তার বর্ণনা অনুযায়ী সেটা যৌক্তিকও মনে হয়েছিল। তবে রাখাইন বাজারে থাকা কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টারে গিয়ে খবর নিয়েছিলাম। ওখানে কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি রুমান ইমতিয়াজ তুষার ভাইয়ের পরামর্শমতো আমরা ভেঙে ভেঙে বরগুনার টেংরাগিরি ইকোপার্কে গিয়েছি। ভাড়া পড়েছে জনপ্রতি মাত্র প্রায় ২৫০ টাকা। বুঝেন এবার অবস্থাটা!
৬) কুয়াকাটায় আগত ট্যুরিস্টদের সকল প্রকার তথ্য দিয়ে সহায়তার জন্য সম্পূর্ণ অলাভজনক একটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে যার নাম হলো “কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টার”। প্রতিষ্ঠানটি আপনাকে ভালো ভালো তথ্য দিতে পারবে। অন্তত আপনি এদের পরমার্শ নিলে কোথাও ঠকবেন না। এজন্য রুমান ইমতিয়াজ তুষার ভাইয়ের সাহায্য নিতে পারেন (সভাপতি-কুয়াকাটা প্রেসক্লাব, ম্যানেজিং ডিরেক্টর-কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট সেন্টার, ফোন : ০১৭১১১১৩৪১২, ০১৯২৩৮৯২৭৩২)।
৭) কুয়াকাটা ঘুরার জন্য বাইক হলো দ্রুত ও স্বাচ্ছন্দ্যের বাহন। তবে দরদাম করবেন।
কুয়াকাটায় কোনো রিক্সা নাই, সব ভ্যান গাড়ি।যাতায়াতের জন্য সবসময় ভ্যান বা মোটরসাইকেল ব্যাবহার করতে হবে।
কিছু প্রয়োজনীয় নম্বরঃ
পটুয়াখালীর লঞ্চঃ
কুয়াকাটা ১ঃ ০১৭৩৬৬২০৫৮০
সুন্দরবন ৯ :০১৭১১৩৫৮৮১০
কাজল ৭ঃ ০১৭৯৮৮৪৯৭৪৭জামাল ৫ঃ
বরিশালের লঞ্চঃ
সুন্দরবন ৯ঃ ০১৭১৪০১৭২৭২
সুরভী ৮ঃ ০১৭১২৭৭২৭৮৬
পটুয়াখালীর লঞ্চঃ
কুয়াকাটা ১ঃ ০১৭৩৬৬২০৫৮০
সুন্দরবন ৯ :০১৭১১৩৫৮৮১০
কাজল ৭ঃ ০১৭৯৮৮৪৯৭৪৭জামাল ৫ঃ
বরিশালের লঞ্চঃ
সুন্দরবন ৯ঃ ০১৭১৪০১৭২৭২
সুরভী ৮ঃ ০১৭১২৭৭২৭৮৬
========================================================================
মন্তব্য অথবা কোন প্রশ্ন থাকলে নিচে কমেন্ট করুন।
Post a Comment